কয়েক বছর আগেও ভোরের আলো ফুটতেই তাঁতের খট খট শব্দে মুখরিত হতো তাঁতপল্লিগুলো। কিন্তু দফায় দফায় তাঁত কাপড়ের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ তুলতে পারছে না প্রান্তিক তাঁতীরা। এ কারণে একের পর এক তাঁতকল বন্ধ হওয়ায় বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প।
আধুনিক যুগে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অব্যাহত লোকসানে দুর্দিন নেমে এসেছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনার তাঁত শিল্পী পরিবারে। টিকতে না পেরে অনেকে ছেড়েছেন এই পেশা। কাজের অভাবে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন তারা। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন কাকিনার তাঁত শিল্পীরা। একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাঁতের কাজ। অনেকেই এ পেশা ছেড়েছেন। আবার বাপ-দাদার পেশা বলে অনেকেই এটি আগলে ধরে আছেন।

শনিবার (৯ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কাকিনা গ্রামে তিন শতাধিক তাঁতী ছিল। বর্তমানে সেই সংখ্যা নেমেছে অর্ধেকে। খুড়িয়ে খুড়িয়ে কিছু চরকা চললেও বেশিরভাগই বন্ধ। বাজারে সুতা-রঙসহ আনুষাঙ্গিক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ও আধুনিক পোশাক কারখানার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকাই চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁতের সঙ্গে সম্পৃক্ত পরিবারগুলো বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ১৫০টি তাঁতকল। লোকসানে পড়ে পেশা বদলেছেন অনেকেই। তাঁতিদের অভিযোগ- সুতা, রঙ, কেমিক্যালসহ তাঁতবস্ত্র উৎপাদনের সব উপকরণের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধিতে উৎপাদন ব্যয় যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সে অনুযায়ী উৎপাদিত কাপড়ের মূল্য বৃদ্ধি পায়নি। তবে প্রচার বাড়নো হলে এই শিল্প তার পুরোনো ঐতিহ্য ফিরে পাবে বলে আশা করছেন পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা।
কথা হয় কাকিনা তাঁতিপাড়া গ্রামের শফিয়ার রহমানের সাথে। তিনি বলেন, এটা আমার বাপ-দাদার পেশা। ছাড়তে না পারলেও লোকসান ঠিকই গুনতে হচ্ছে। পরিবার চালানো খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দিকে সরকারের সু-দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
আরেক তাঁতী আমজাদ হোসেন বলেন, মূলধনের যোগান ও পণ্য বিপনণের ব্যবস্থা করা গেলে আবারও ঘুরে দাঁড়াবে এই শিল্প। এতে ঐহিত্য ধরে রাখার পাশাপাশি বাড়তি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে কাকিনায়।

নারী তাঁত শ্রমিক মনোয়ারা বেগম বলেন, আমাদের মজুরি কম, কোন বোনাসও নেই। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাঁতের কাজ করি। তবে তাঁত পণ্যের এখন দাম কম হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে আমরা ভালো নেই। খুব কষ্টে দিনানিপাত করছি এখন।
কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুকান্ত সরকার বলেন, তাঁত শিল্প আমাদের একটা অন্যতম ঐতিহ্য। কাকিনায় কিছু তাঁত শিল্পী রয়েছে, যারা খুব সুন্দর পণ্য তৈরি করছে। সমাজসেবা অফিস থেকে তাদের জন্য ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাদের মধ্যে যদি কোন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি থাকে আমরা তাকে ভাতা এবং সুবিধা দিতে পারি।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন