শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


এম. মতিন, চট্টগ্রাম রাঙ্গুনিয়া

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২৪, ০১:২০ এএম

রাঙ্গুনিয়ায় কাঠ পাচার বিরান বনভূমি

এম. মতিন, চট্টগ্রাম রাঙ্গুনিয়া

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২৪, ০১:২০ এএম

রাঙ্গুনিয়ায় কাঠ পাচার বিরান বনভূমি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাঙ্গুনিয়ায় ইট পোড়ানোর মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় একের পর এক বৃক্ষশূন্য হচ্ছে সংরক্ষিত বন। দিনেদুপুরে পাচার হচ্ছে কাঠ। একই সঙ্গে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। পাশাপাশি সংরক্ষিত এসব ন্যাড়া পাহাড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ বসতি। অথচ বনভূমি রক্ষা ও দেখভালের কাজে বন বিভাগ নিয়োজিত থাকলেও তা শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। বন বিভাগের কর্মকাণ্ড যেন অনেকটা নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমানোর মতো।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এবার শীত মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাঙ্গুনিয়ার সবুজ পাহাড়ে শুরু হয়েছে কচি চারাগাছ নিধনের মহোৎসব। ড্রাম্প জিপ গাড়ি ও ট্রাকে ট্রাকে এসব কচি চারাগাছের লকড়ি পাচার হচ্ছে। যা অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনেদুপুরে এসব বৃক্ষনিধনের মহোৎসব চললেও রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকায় বন বিভাগ। ফলে দিনের পর দিন ন্যাড়া হয়ে পড়ছে রাঙ্গুনিয়ার সবুজ পাহাড়গুলো। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো স্থানে বনদস্যু ও ভূমিদস্যুদের করাল গ্রাস থেকে ন্যাড়া পাহাড়ও রক্ষা পাচ্ছে না। ন্যাড়া পাহাড়ে শত শত অবৈধ বসতি স্থাপনের পাশাপাশি পাহাড় কেটে বিক্রি করা হচ্ছে মাটি।

জানা গেছে, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে দিনে-রাতে প্রতিদিন শতাধিক টন চারাগাছের লাকড়ির গাড়ি উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় পাচার করা হচ্ছে। কাঠের লাকড়ি শস্তায় পাওয়া যায়, তাই রাঙ্গুনিয়ার ইটভাটাগুলো কয়লার পরিবর্তে এই লাকড়ি দেদার ব্যবহার করছে। অথচ বন আইন অনুসারে সন্ধ্যার পর বৈধ বা অবৈধ কোনো ধরনের কাঠ সড়ক দিয়ে স্থানান্তর না করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এই বিধান বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেই।

আরো জানা গেছে, যাদের ওপর এই বিধান বস্তবায়নের দায়িত্ব, সেই একশ্রেণির বন কর্মকর্তার যোগসাজশে রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন সড়ক ও নদীপথে টনে টনে লাকড়ি ইটভাটায় চলে যাচ্ছে। প্রতি চাঁদের গাড়ি বা ট্রাকের চাঁদার টোকেন বন কর্তাদের কাছে জমা হওয়ার পর গাড়িগুলো ফ্রি চলাচলের অনুমতি পেয়ে যায়। রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ, ইছামতী রেঞ্জ, ইসলামপুর, বগাবিল, কোদলা, খুরুশিয়া, চিরিঙ্গা, পোমরা বনবিট ও কর্ণফুলী  নদীর পাশে বনজ শুল্ক ফাঁড়ি থাকলেও টোকেন দেখানোর পর সেখানে দায়িত্বরতরা নীরব দর্শক হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে এই পদ্ধতি চালু থাকায় রাঙ্গুনিয়ার শ্যামল পাহাড়গুলো বর্তমানে ন্যাড়া মাথার রূপ ধারণ করছে।

কথায় আছে-‘কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই।’ রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বনসম্পদের বেলায় এই প্রবাদবাক্যটি পুরোই মিলে যায়। পাহাড়ে অশ্রেণিভুক্ত বনাঞ্চলের বেলায়ও তা-ই হয়েছে। বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ইটভাটা করার জন্য কিছু শর্ত আরোপ করা আছে। 

ইটভাটার মালিকেরা তা কোনো সময় মেনে চলেন না। কিছু চালাক মালিক ইটভাটার প্রবেশমুখে কিছু কয়লা স্তূপ করে রাখেন। যাতে কোনো কারণে প্রশাসনের লোকজন গেলে তা দেখানো যায়। শুধু পাহাড়ের কাঠ পোড়ানোর সুবিধার জন্য রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় ও সংরক্ষিত বনের পাশে গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ ইটভাটা। আবার এসব উপজেলার ইটভাটাগুলোতে মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযানও চালানো হয়ে থাকে। তবে কোনো ইটভাটা বন্ধ হয় না।

এদিকে রাত হলে অবৈধ কাঠের গাড়ি চলাচলে সরব হয়ে ওঠে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম,  কাপ্তাই-চট্টগ্রাম, রাজস্থলী-চন্দ্রঘোনা, বান্দরবান-বাঙ্গালহালিয়া, কাউখালী-রানীরহাট ও মরিয়মনগর-রানীরহাট। এসব সড়ক দিয়ে কাঠ পাচার হয়ে থাকে। এ ছাড়া নদীপথগুলোর মধ্যে রয়েছে- কর্ণফুলী, ইছামতী, শিলকখাল ইত্যাদি। এসব স্থানের সড়কগুলো রাত হলে কাঠপাচারকারীদের দখলে চলে যায়।

একশ্রেণির লোভী ব্যবসায়ীর কারণে সরকারি-বেসরকারি সামাজিক বন-বাগান থেকে শুরু করে ব্যক্তিমালিকানা বাগান পর্যন্ত রক্ষা পাচ্ছে না। পাচারকারীরা এতই বেপরোয়া যে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাগান মালিককে ভয় দেখিয়ে কচি গাছ নামমাত্র মূল্যে কেটে নিয়ে যায়।

প্রশাসনের একটি অসাধু মহল পাচারকারীদের কাছ থেকে সুবিধা পায় বিধায় অনেক সময় মাস্তানদের ভয়ে নিরীহ মানুষ তাদের সৃজিত বাগান পানির দরে লাকড়ি হিসেবে বিক্রি করতে বাধ্য হন। কোথাও গিয়ে তেমন কোনো প্রতিকারও পান না বলে ভুক্তভোগীরা জানান। এ অবস্থার উত্তরণ করা না হলে পাহাড়ে আবারও গত ১৩ জুনের মতো ভয়াভহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।

এ বিষয়ে ইছামতী রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি জরুরি কাজের অজুহাত দেখিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান এ বিষয়ে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, কোনো ইটভাটা পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ করলে ছাড় দেওয়া হবে না। যদি কোনো ইটের ভাটায় বনের কাঠ, ফসলি জমির উর্বর মাটি ও পাহাড় কেটে মাটি ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেসব ইটের ভাটা বন্ধ করে মালিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!