২০০৯ সালে অভাব অনটনের কারণে আমরা কয়েকজন মিলে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার খলসি গ্রামে কাজ করতে যাই। ওই এলাকার মানুষের ক্ষেত খামারে ৫ বছরের মতো কাজ করি। ওই এলাকার মানুষেরা বেশিরভাগই কৃষি কাজ করে হাজার হাজার টাকা আয় করে। আমি ওখানে ক্ষেতে কাজ করে কৃষি কাজ করা শিখেছি । পরবর্তীতে পাঁচ বছর পরে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসি। এসে কোন কাজ কাম না পেয়ে আমাদের জমির ভেড়িতে লাউ, শিম, বরবটি, কুমড়ো, উস্তে, খিড়ায়ের চাষ করি। চাষকৃত সবজি বাজারে বিক্রি করি, বাজার দরে দামও ভালো পাই। পরবর্তীতে আমি দুই বিঘা জমিতে সবজি লাগানো শুরু করি। আমার খেতে সারাবছর বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন করি। ঘুগরাকাটি বাজার, আমাদি বাজার, চাঁদ আলী মাছের কাঁটা, খাজরা বাজার জায়গীর মল হাসপাতাল মোড়েসহ বিভিন্ন আশপাশের বাজারের দোকানদাররা আমার কাছ থেকে সবজি পাইকারি কেনেন। আমার ক্ষেত্র থেকে আমাদের গ্রামের আশপাশের লোকজনও সবজি কমবেশি কিনে নিয়ে যায়। সবজি চাষ করে আমি আর্থিকভাবে প্রতি বছর লাভবান হচ্ছি। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে সবজি ক্ষেত করি কিন্তু কৃষি অফিস থেকে কোন পরামর্শ পায়নি। সবজি বিক্রি করে প্রতিবছর ১ থেকে দেড় লাখ টাকা আমার আয় হচ্ছে । আমার দেখা দেখি আমাদের জায়গীর মহল পশ্চিম বিলে ১০ জনেরও বেশি কৃষক সবজি ক্ষেত করেছে। সবজি চাষে আমার কপাল খুলেছে এভাবে কথাগুলো বলেছিলেন জায়গীর মহল পশ্চিম বিলের কৃষক মৃত ইব্রাহিম মোল্লার পুত্র মোখলেছুর মোল্লা (৩৫)।
একই বিলের কৃষক মোহাম্মাদ মোল্লার পুত্র মো. লিয়াকত মোল্লা বলেন, আমাদের বিলে মোকলেছুরের সবজি চাষ করা দেখে আমি আমার দেড় বিঘা জমিতে সবজি চাষ করা শুরু করি। প্রতিবছর প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা সবজি বিক্রি করি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এখানে আজও পর্যন্ত কোন কৃষি অফিসার আসেনি, যদি কোন উপসহকারী কৃষি অফিসার এসে আমাদের একটু সৎ পরামর্শ দিত তাহলে আমরা আরো লাভবান হতে পারতাম। আমাদের এই এলাকার মানুষ আস্তে আস্তে আরো সবজি চাষের উপর আগ্রহ দেখাচ্ছেন। অনেকেই নতুন করে ক্ষেত তৈরি করছে। আমাদের এলাকার রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো না, কোন বড় ধরনের গাড়ি রাস্তা দিয়ে আসতে পারে না আমরা মাথায় করে মালামাল নিয়ে বিভিন্ন হাটে বাজারে বিক্রি করি।
তিনি আরো বলেন, আমরা কপোতাক্ষ নদের দুর্বল ভেড়িবাঁধের পাশে আমাদের জায়গীর মহল পশ্চিম বিলের ফসলি খেত। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্যোগ হলে, আমাদের ফসলি জমিসহ পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে যাবে সে কারণেই দুর্বল বেড়িবাঁধ দ্রুত সংস্কার করার দাবি জানান তিনি ।
একই বিলের কৃষক রুহুল আমিন বলেন, আমাদের বিলে কয়েকজন কৃষকের সবজি চাষ দেখে আমি তিন বছরের মতো আমার নিজস্ব ১৮ কাঠা জমিতে সবজি চাষ করছি। খেতে আমি সহ আবার স্ত্রীও কাজ করি । এতে বছরে এক লক্ষের বেশি টাকা তাই হচ্ছে।
শনিবার বেলা বারোটায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কপোতাক্ষ নদের পার্শ্ববর্তী জায়গীর মহল পশ্চিম বিলে প্রায় ১০ থেকে ১৫ বিঘা জমিতে গড়ে উঠেছে সবজি ও মাছ চাষ। এই বিলে ১০/১২ জন কৃষক সবজি ক্ষেত করেছেন। আর নিজস্ব ক্ষেতগুলোতে প্রখর রোদ্রে পুড়ে কাজ করছেন কৃষকরা। এ সময় রুহুল আমিনের খেতে তরকারি কিনতে আসা আবুল কালাম মোল্লার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বাজারের চেয়ে থেকে তরকারি কিনলে দামে কম পাওয়া যায় এবং টাটকা তরকারি পাওয়া যায় এ কারণেই আমরা আপাতত বাজার থেকে বেশি সবজি ক্রয় করছি না । আমাদের বাড়ির পাশ থেকে কৃষকদের ক্ষেত্রকে আপাতত বেছে নিয়েছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন বলেন, কয়রা উপজেলায় আমন আবাদের পর সব থেকে বেশি চাষ হয় সবজি ও তরমুজ। ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তি ও লবণসহিষনু জাতের আবাদের ফলে মাছের ঘের ও বসত বাড়ির আঙিনায় সবজির আবাদ বাড়ছে। মিষ্টি পানির নিশ্চিত করতে পারলে সবজির আবাদ আরো বাড়ানো সম্ভব হবে।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                    -20251031233315.webp) 
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                    -20251031164732.webp) 
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন