সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের দুবলার চর এলাকার বহির্সমুদ্র থেকে অপহৃত ১৫ জেলের মধ্যে ১০ জনকে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে জলদস্যুরা। প্রত্যেক জেলের জন্য ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা করে মোট ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তাদের মুক্ত করা হয়েছে। তবে, মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে না পারায় এখনও পাঁচজন জেলে জলদস্যুদের হাতে বন্দী রয়েছেন।
গত বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ এলাকায় জঙ্গল থেকে ডিঙ্গি নৌকায় করে উপরে উঠিয়ে দিয়ে যায় জলদস্যুরা। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ভোর রাত ৩টার দিকে তারা বাড়িতে পৌঁছান।
মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা জেলেদের মধ্যে ৭ জনের বাড়ি আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নে। দুইজনের বাড়ি শ্যামনগরে ও আরেকজনের বাড়ি খুলনার কয়রায়।
ফিরে আসা জেলেরা হলেন, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের সুভদ্রাকাটি গ্রামের মো. দাউদ আলী সানার ছেলে আজাহারুল ইসলাম, রুইয়ারবিল গ্রামের জুলফিকার সরদারের ছেলে আলমগীর হোসেন, একই গ্রামের শহর আলী গাজীর ছেলে হাফিজুর রহমান, আব্দুল হক সানার ছেলে মো. শাহীনুর আলম, দিঘালারাইট গ্রামের মো. আবু দাউদ জদ্দারের ছেলে মো. রাসেল, শ্রীপুর গ্রামের মো. রুহুল আমিন ঢালির ছেলে মো. শাহাজান ঢালী ও দৃষ্টিনন্দন গ্রামের মো. আনিচ সরদারের ছেলে নুরে আলম এবং শ্যামনগর উপজেলার বন্যতলা গ্রামের আবু তালেব এর ছেলে শাহ্ আলমসহ ১০ জন।
মুক্তিপণের টাকা দিতে না পারায় অন্য পাঁচজনকে এখনো আটকে রেখেছে জলদস্যুরা। এদের মধ্যে সাতক্ষীরার আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামের মো. মহিজুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলম, একই গ্রামের মো. নুরমান আলী সরদারের ছেলে অরাফাত হোসেন ও শামছুর রহমান গাজীর ছেলে শাহাজান গাজী মুক্তিপণের টাকা দিতে পারেনি।
গত ২৬ জানুয়ারি আনুমানিক ভোর ৬টার দিকে সুন্দরবনের ডাকাত দয়াল বাহিনী সদস্যরা সুন্দরবনের দুবলার চরের নিরীহ জেলেদের উপর আক্রমণ করে। এ সময় দুঃসাহসী জেলেরা নিজেদের আত্মরক্ষার্থে ডাকাতদেরকে প্রতিহতের চেষ্টা করে এবং একই সঙ্গে দুবলার চরের কোস্টগার্ড স্টেশনে সাহায্য চেয়ে ফোন করে।
ডাকাতদের সঙ্গে জেলেদের হাতাহাতির একপর্যায়ে জেলেরা তিন ডাকাতকে জাল দিয়ে ধরে ফেলে। কিন্তু এসময় ডাকাতরা সেখান থেকে ১৫ জেলেকে ধরে নিয়ে যায়।
অপহৃত চাকলা গ্রামের শাহাজান গাজীর স্ত্রী নাজমা খাতুন জানান, স্বামী বাড়ি আসছে খবর পেয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টা পর্যন্ত জেগে বেড়িবাঁধের ওপর বসে ছিলাম। কিন্তু প্রতাপনগরের সাতজন আসলেও তার স্বামীসহ চাকলা গ্রামের আরও তিন জন এখনো ফিরতে পারেনি। দরিদ্র অসহায় পরিবারের পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। তিনি স্বামীকে মুক্তির দাবি জানিয়ে সকলের সহযোগিতা প্রার্থনা করেছেন।
প্রতাপনগর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার গোলাম রসুল জানান, মাথাপিছু ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নিয়ে অপহৃত ১৫ জেলের মধ্যে ১০ জেলেকে মুক্তি দিলেও মুক্তিপণের টাকা দিতে না পারা অন্য পাঁচ জনের মধ্যে প্রতাপনগর গ্রামের তিনজন রয়েছে। মুক্তিপণের টাকা দিতে না পারায় তাদেরকে এখনো জিম্মি করে রেখেছে জলদস্যুরা।
প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু দাউদ ঢালী তার ইউনিয়নের সাতজন জেলে ফিরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বাকিদের কাছে নৌকা থাকায় এবং মুক্তিপণের টাকা দিতে না পারায় জলদস্যুরা তাদেরকে ছাড়েনি।
এদিকে ২৬ শে জানুয়ারি জেলেদের জলদস্য বাহিনী ধরে নিয়ে গেলে তাদেরকে উদ্ধরের জন্য উদ্ধারের জন্য ২৮ জানুয়ারি দুবলার চর ১২০০০ জেলের পক্ষে দুবলার ফিসারম্যান গ্রুপের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন আহমেদ ২৮ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদন করেন। তারপরও সেখান থেকে দীর্ঘদিন কোন সাড়া না পাওয়ায় জেলেদের পরিবার হতাশ হয়ে পড়ে।
অপরদিকে অপহৃত জেলের ভাই শামীম আহমেদ জানান, তার ভাইসহ অন্য জেলেদের উদ্ধার করার জন্য পুলিশ,সহ শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদের জানিয়ে কোন লাভ না হওয়ায় এসব জেলেরা তাদের ভিটামাটি বিক্রি করে ও মহাজনি সুদে টাকা নিয়ে জলদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা এবিএম হাবিবুল ইসলাম জানান, তাদেরকে জেলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। তবে তিনি বিষয়টি শুনেছেন।

 
                            -20250214130906.webp) 
                                    


 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                    -20251031233315.webp) 
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                    -20251031164732.webp) 
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন