বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভোলা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫, ০২:১৫ পিএম

৭৩ বছর পরেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি ভাষাসৈনিক চুন্নু মিয়ার

ভোলা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫, ০২:১৫ পিএম

৭৩ বছর পরেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি ভাষাসৈনিক চুন্নু মিয়ার

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূচনা পর্বে যে ক’জন সাহসী সূর্য সন্তান তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন, মরহুম রেজা-এ-করিম চৌধুরী (চুন্নু মিয়া) ছিলেন সেই সাহসী, স্বপ্ন সারথিদের অন্যতম। সততা ও সাহসীকতা হিসেবেও চারদিকে চুন্নু মিয়ার খ্যাতি ছিল। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ আন্দোলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের ন্যায্য আন্দোলন, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন, যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন এসবের পিছনে অসামান্য অবদান রেখেছেন চুন্নু মিয়া। ৫২’র ভাষা আন্দোলনে যার ছিল সক্রিয় অংশগ্রহণ। তবে ভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পেরিয়ে গেলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি এই ভাষাসৈনিকের।

১৯৩১ সালে দেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের আব্দুল জব্বার মিয়া বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন ভাষা সৈনিক রেজা-এ-করিম চৌধুরী (চুন্নু মিয়া)। তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমএলএ) নির্বাচিত হন। ছিলেন ভোলার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। এ ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। বিনা বেতনে শিক্ষাকতা করেছেন বোরহানউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আব্দুল জব্বার কলেজে। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী এ ব্যক্তি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান ২০০৭ সালের ২ মার্চ শুক্রবার।

এলাকাবাসী চুন্নু মিয়ার স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি সম্বলিত স্মরকলিপি দিয়েছিলেন ভোলার তৎকালীন জেলা প্রশাসক বেলায়েত হোসেনের কাছে। কিন্তু ওই সময়ে ডিসি দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলেও রহস্যজনক কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। ভাষা সৈনিক রেজা-এ-করিম চৌধুরী চুন্নু মিয়ার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি ভোলাবাসীর।

ভাষা সৈনিকের ব্যক্তিগত ডায়রি ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, চুন্নু মিয়া ঢাকা কলেজে অধ্যয়ন করার সময় মাত্র ১৯ বছর বয়সে ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ১৯৫২ সালে জিন্নাহর রাষ্ট্র ভাষা উর্দূ ঘোষণার পর তার মধ্যে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠল। তখন তিনিসহ তার সহপাঠীরা তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা কলেজের ভিপি ইকবাল আনসার হেনরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একাত্বতা ঘোষণা করে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।

তার ডায়রি থেকে আরও জানা যায়, ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান সরকার অপরাহ্নে ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে। ছাত্র প্রতিনিধিরা আগেই ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। চুন্নু মিয়ার ভাষায়, আমরা জানতাম ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিলে গেলে নিশ্চিত গুলি হবে। তারপরও মায়ের ভাষার প্রতি অপরিসীম ভালবাসা আমাকে মিছিলে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছে। হঠাৎ মনে পড়ে আমি যদি আগামীকাল মিছিলে গিয়ে গুলিতে শহীদ হই তাহলে আমার লাশের সন্ধান হয়তো আত্মীয়রা পাবে না। এই কথা ভেবে আমি রাতে বসেই আমার পুরো নাম ঠিকানা সাদা কাগজে লিখে পকেটে ঢুকিয়ে রাখলাম। যাতে এই ঠিকানা অনুযায়ী আমার লাশ অন্তত: স্বজনদের কাছে পৌঁছে দিতে পারে।

বায়ান্ন’র ২১ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকেই ছাত্র নেতৃবৃন্দের পরামর্শ অনুযায়ী ৮/১০ জনের খণ্ড মিছিল শুরু হল। তাদের কলেজের তৃতীয় ব্যাচের মিছিলে ছিলেন তিনি। মিছিল যখন কলাভবনের কাছে পৌঁছাল তখন তাকে সহ অনেককে আটক করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। রাতে তাদের ফাঁড়িতে অবস্থান করতে হয়। সকালে পুলিশ তাকেসহ অন্যদের পুলিশ ভ্যানে করে কোর্টে নিয়ে যায়। কোর্টে হাজির না করেই এক ঘণ্টার মধ্যে তাদের কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হল। এরপর এক মাস কারাভোগের পর ২১ মার্চ মুক্ত আকাশের চোখ দেখেন।

১৯৭১ সালে চুন্নু মিয়া ভোলার মুক্তিযোদ্ধাদের সুসংগঠিত করে স্বাধীনতা যুদ্ধে অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে চুন্নু মিয়া এমএলএ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই সময় তিনি নিজেকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে সীমাবদ্ধ রাখেননি একাধারে ৪টি স্কুলের শিক্ষকতার পাশাপাশি শুধু গ্রাজুয়েট হয়েও আব্দুল জব্বার কলেজে শিক্ষকতা করেন। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের তার লেখা বই “অনন্য সাধন” সবার প্রশংসা পেয়েছে কিন্তু “খেকশিয়ালের অধ:পতন” পান্ডুলিপি জীবদ্দশায় প্রকাশ করে যেতে পারেননি।

স্বীকৃতি ও স্মৃতি সংরক্ষণের ব্যাপারে চুন্নু মিয়ার বড় ছেলে কবির চৌধুরী ও ছোট ছেলে মাহাবুব-উল-আলম চৌধুরী বলেন, বাবার মুখে আমরা ভাষা আন্দোলনের সেই গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা শুনেছি। ওই সময় তিনি স্বীকৃতি, স্মৃতি সংরক্ষণ হবে বা হবে না এ চিন্তা করে আন্দোলনে যোগ দেননি। মায়ের ভাষা বাংলার জন্য আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। এখন রাষ্ট্র যদি মনে করে এটা প্রয়োজন তাহলে ১৯৫২ সালের জেল রেকর্ড তলব করলেই ঘটনার সুরাহা হয়। তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো আশ্বস্ত করা হচ্ছে বিষয়টি নিষ্পত্তির।

এ বিষয়ে বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রায়হন-উজ্জামান বলেন, আমার জানা ছিল না এ উপজেলায় একজন ভাষাসৈনিক রয়েছে। বিষয়টি ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে অচিরেই ভাষাসৈনিক চুন্নু মিয়ার স্মৃতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

আরবি/এসআর

Link copied!