বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিল্লাল হোসেন, যশোর

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৫, ১১:১৬ এএম

যশোর হাসপাতালে মিলছে না চিকিৎসাসেবা

বিল্লাল হোসেন, যশোর

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৫, ১১:১৬ এএম

যশোর হাসপাতালে মিলছে না চিকিৎসাসেবা

ছবি: সংগৃহীত

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আজও তত্ত্বাবধায়ক ও সহকারী পরিচালকের পদ সৃষ্টি হয়নি। বর্তমানে ডা. হুসাইন সাফায়াতকে এখানে সংযুক্তি দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক পদটি পরিচালনা করানো হচ্ছে। তবে সহকারী পরিচালকের স্থানে কেউ নেই। আবার তত্ত্বাবধায়কের অর্ডারে আবাসিক মেডিকেল অফিসারের (আরএমও) একটি পদ ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালানো হচ্ছে। প্রধান প্রধান পদে জোড়াতালি থাকায় হাসপাতালের চেইন অব কমান্ড নেই বললেই চলে। ফলে চিকিৎসা কার্যক্রমে হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে। একই সঙ্গে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ইচ্ছেমতো দায়িত্ব পালন করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি এই হাসপাতালে কর্মরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা শুধু খাতা কলমে রয়েছে। বাস্তবে তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না। মাঝে মাঝে ওয়ার্ড রাউন্ডে গেলেও তড়িঘড়ির কারণে রোগীরা ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। এ ছাড়া যশোর মেডিকেল কলেজের ডাক্তাররা হাসপাতালে ঠিকমতো চেম্বারে বসেন না। তারা ইচ্ছামতো আসেন আর যান। তত্ত্বাবধায়কের নির্দেশনাও তারা কর্ণপাত করেন না।

মেডিকেল কলেজের অধীনে থাকায় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক তাদের বিরুদ্ধে জোরালোভাবে ব্যবস্থা নিতে পারেন না। তাদের অনিয়মের কারণে রোগীরা সরকারি হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে অনেকেই সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে ক্লিনিকে চলে যেতে বাধ্য হন। এতে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত বাণিজ্য আরও বেড়ে যায়। ক্লিনিক বাণিজ্য জমজমাট করার জন্য চিকিৎসকরা সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন। হাসপাতাল চলছে ইন্টার্ন ও অনারারি দিয়ে। সাধারণ রোগীদের সঙ্গে তারাও খুব খারাপ আচরণ করেন।

সূত্র জানায়, ডা. আবুল কালাম আজাদ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক পদে দায়িত্ব পালনকালীন ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করা হয়েছিলো কোন ইন্টার্ন ডাক্তার রোগীর মৃত্যু ঘোষণা দিতে পারবেন না। এছাড়া রোগীকে রেফার্ড ও ছাড়পত্র  দেবেন না তারা। কিন্তু বর্তমানে সব কিছু চলছে আগের মতোই।

যশোর শহরের বেজপাড়া মেইন রোডের পারভেজ আহমেদের ছেলে ইসতিয়াক আহমেদ (২৬)। তার বুকের আঘাতটি গুরুতর হলেও কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাকে দেখতে আসেননি। একজন ইন্টার্ন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে দেন। ওই রোগীর স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আরেক মেডিকেলে রেফার্ড করা সত্যিই দুঃখজনক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনিয়মের কারণে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এতে আর্থিক ক্ষতির সাথে দুর্ভোগ বাড়ে। ইসতিয়াকের মতো একাধিক রোগীকে প্রতিদিন রেফার্ড করছেন ইন্টার্নরা।

চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলা গ্রামের সবজি বিক্রেতা রোকনুজ্জামান জানান, তার এক আত্মীয় কীটনাশক পান করে জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ভর্তি হন। দুইদিন হাসপাতালে থাকলেও রোগী উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

কারণ হিসেবে তিনি জানান, দুই দিনই ইন্টার্নরা তাকে চিকিৎসা দিয়েছেন। কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর কাছে আসেননি।

পুরুষ সার্জারি চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন আতিকুর রহমান জানান, গত বৃহস্পতিবার তার রোগীকে ভর্তি করা হয়। জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা ছাড়া সারাদিনে কোনো চিকিৎসক রোগীর কাছে যাননি। পরের দিন শুক্রবারও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রাউন্ডে আসেননি। ইন্টার্ন চিকিৎসক ছাড়া কোনো চিকিৎসককে দেখা পাননি।

আতিকুর রহমানসহ অনেকেই জানান, সরকারি এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নেই বললেই চলে। জরুরি মুহূর্তে রোগীর চিকিৎসাসেবায় ডাক্তার পাওয়া যায় না। কিছু কিছু সময় সিনিয়র সেবিকারা রোগীর কাছে আসেন না। ডাকলেও বাজে আচরণ করেন।

অভিযোগ উঠেছে, বিশেষজ্ঞরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না। তারা ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ব্যক্তিগত বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। বিশেষজ্ঞরা শুধু খাতা কলমে রয়েছে। ইন্টানরা এখন মূল ভূমিকায় রয়েছেন। ইন্টার্নরা ছাড়াও ওয়ার্ডবয় আয়া ও ঝাড়ুদার রোগীর চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। ভর্তি ওয়ার্ডে কাটা ছেড়া রোগী আসলেই এগিয়ে আসেন তারা।

রোগীর স্বজনদের হাতে চিকিৎসা সামগ্রী কেনার শর্ট স্লিপ ধরিয়ে দেন। এরপর ইনজেকশন সিরিঞ্জ, স্যালাইন, সুই সুতো নিয়ে তারাই করেন চিকিৎসা। আবার ক্যানোলা, ইউরিন ব্যাগ, খাদ্য গ্রহণের পাইপ লাগানো কাজও তারা করেন। এতে তারা লাভবান হন। কেননা প্রতি রোগীর স্বজনদের জিম্মি করে হাসপাতালের কর্মীরা অর্থবাণিজ্য করেন। সার্জারি, মেডিসিন, গাইনি ওয়ার্ডে অধিকাংশ সময় চিকিৎসকের ভূমিকায় ওয়ার্ডবয় ও ঝাড়ুদারকে দেখা যায়। অর্থ ছাড়া কোনো কাজই করছেন না তারা। দাবির চেয়ে টাকার পরিমাণ কম হলেই রাগারাগি করেন।

হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে হাসপাতালের চেইন অব কমান্ড দুর্বল হয়ে পড়ায় চিকিৎসক সেবিকা কর্মচারীরা যা ইচ্ছা তাই করছেন। সঠিকভাবে তদারকি ব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা না থাকায় হাসপাতালে অনিয়ম বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকটের অজুহাতে রোগীদের চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত করা হচ্ছে। আর যেসব বিশেষজ্ঞ হাসপাতালে কর্মরত তারা রোগীর প্রতি চরম উদাসিন। হাসপাতালে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে ক্লিনিক- ডায়াগনস্টিকে ব্যস্ত থাকেন তারা।

হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের প্রধান দুটি পদ স্থায়ী না করার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের কোনো সাড়া নেই। বছরের পর বছর পদ দুটিতে ওএসডি কোনো কর্মকর্তাকে সংযুক্তি করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক পদে একজন সংযুক্ত থাকলেও ৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে  সহকারী পরিচালক পদে কেউ নেই। ২০০৯ সালে হাসান আল মামুনকে তত্ত্বাবধায়ক (উন্নয়ন) পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর থেকে আর কেউ এই পদে আসেননি। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উন্নয়নের তত্ত্বাবধায়ক পদটি বিলুপ্ত করে। এ ছাড়া সহকারী পরিচালক পদ সৃষ্টি করা হয়নি। বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক ও সহকারী পরিচালক পদটি পরিচালনা করা হয় অন্য কাউকে সংযুক্তি করে। প্রশাসনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ সৃষ্টির জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সাড়া মেলেনি।

হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত  জানান, তিনি নতুন এসেছেন। অনিয়ম দূর করে সঠিকভাবে হাসপাতাল পরিচালনা করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। 

আরবি/এসআর

Link copied!