বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রেজাউল করিম, রংপুর

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৫, ০২:৫১ এএম

পরিবারে হাহাকার ঈদে সব কিছু থাকলেও নেই শুধু আবু সাঈদ

রেজাউল করিম, রংপুর

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৫, ০২:৫১ এএম

পরিবারে হাহাকার ঈদে সব কিছু থাকলেও  নেই শুধু আবু সাঈদ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

একটা সময় অভাব-অনটন ছিল। তবে আবু সাঈদ ছিল। এখন অনেক কিছুই হয়েছে, কিন্তু সে নেই। টিউশনির টাকায় কেনা জামা কিংবা মেহেদির রঙে মেশানো নিখাদ ভালোবাসাটুকু হয়তো স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে অন্য সব অর্থবিত্তের বেড়াজালে। তবে তার না থাকাটাই যেন এক আকাশ সমান শূন্যতা, বুকভরা হাহাকার কিংবা অপূর্ণতার দীর্ঘশ্বাস তার পরিবারে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নায়ক শহিদ আবু সাঈদকে ছাড়াই বুকের কোণে লুকিয়ে থাকা এমন শূন্যতা-হাহাকার আর দীর্ঘশ্বাস নিয়েই এবার প্রথম ঈদ কাটবে মা-বাবাসহ স্বজনদের। 

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের জাফরপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন আবু সাঈদ। বাবা মকবুল হোসেন একজন দিনমজুর। ছয় ভাইয়ের মধ্যে আবু সাঈদ ছিলেন সবার ছোট। তাদের তিন বোন। এর মধ্যে সুমি খাতুন (২০) সবার ছোট।

ফেলে আসা ঈদের দিনগুলো মনে করে আবেগাপ্লুত সুমি বলেন, ভাই যতটুকু পারত আমার বাচ্চা, বড় বোনের বাচ্চাদের জন্য জামা, মেহেদি কিনে আনত। ঈদের সময় বাড়িতে এসে ছুটে যেত আমার শ্বশুরবাড়িতে। মনে হয় না যে ভাই আর নেই। 

মনে হয় এবারও হয়তো ভাই ঈদে বাড়িতে এসে আমার কাছে আসবে। ভাইয়ের হাসি, ভাইয়ের স্মৃতি কল্পনায় ভেসে ওঠে। মনে হয় ভাই এখনো জীবিত আছে।

সুমি বলেন, এবারের ঈদটা অনেক কষ্টে কাটবে। আগে আমাদের কোনো কিছুই ছিল না। যা পেতাম তাই ভাগাভাগি করে হাসিখুশিতে খেতাম। এখন হয়তো টাকা-পয়সা আছে অনেক। কিন্তু ভাইয়ের সঙ্গে সেই ভাগাভাগিটা আর হবে না।

আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, গোটা দেশটা দিলেও তো অন্তরটা ঠান্ডা হবে না। যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হবে না। আর কোনো দিন তো ফিরে পাব না তাকে। 

টিউশনির টাকায় ঈদে বাবার জন্য পাঞ্জাবি ও মায়ের জন্য শাড়ি আনতেন আবু সাঈদ। ঈদের দিন একসঙ্গে নামাজ পড়তে যাওয়ার স্মৃতি মনে পড়লে খুব কষ্ট হয় বাবার। সেইসব স্মৃতি আর আওড়াতে চান না বৃদ্ধ মকবুল হোসেন। 

তবে ছেলের হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব আসামির গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান তিনি। অনেক কিছুই হয়েছে। হয়তো আরও হবে। তবু কোথায় যেন কিছু একটা নেই। হয়তো এই না থাকাটাই মা মনোয়ারা বেগমের বুকজুড়ে শূন্যতা, মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে জেগে ওঠার কষ্ট, নীরবে-নিভৃতে বেরিয়ে আসা চোখের জল।

মনোয়ারা বেগম বলেন, মনে খুব বেশি শান্তি লাগছে না। মনের কষ্ট মনে নিয়েই কাটাতে হবে ঈদের দিন। যত দিন বেঁচে থাকব, এই কষ্ট দূর হবে না। আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। 

গত বছরের ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। ১৭ জুলাই বাবনপুরে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয় তাকে। 

আবু সাঈদকে প্রকাশ্যে গুলি করার দৃশ্য দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে সারা দেশে আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের।

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শওকাত আলী  বলেন, আবু সাঈদের শূন্যতা আমাদের প্রতিদিনই কষ্ট দেয়। এবারের ঈদে আবু সাঈদ নেই, সেটা তার পরিবারকে যেমন বেদনা দিচ্ছে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারও শোকাহত।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!