ঢাকা সোমবার, ০৫ মে, ২০২৫

জয়পুরহাটে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ৫, ২০২৫, ০৪:৫২ পিএম
জয়পুরহাটে মোহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের মোহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ঝুঁকির মধ্যে পাঠ নিচ্ছেন শ্রেণিকক্ষে।

বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি এক যুগ আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। এই দীর্ঘ সময়েও করা হয়নি সংস্কার।

এতে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে, অন্যদিকে মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে শিক্ষার্থী ও অবিভাবকদের মধ্যে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মোহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঁচটি কক্ষে চলছে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান। প্রতিটি কক্ষের দেয়ালেই দৃশ্যমান রয়েছে বৃহৎ অংশ জুড়ে ফাটল।

ছাদের অনেক অংশ থেকে সিমেন্টের প্লাস্টার খুলে পড়ার উপক্রম। বেঁকে গেছে ভবনের কয়েকটি পিলার। ফাটলযুক্ত কয়েক স্থানে করা হয়েছে সংস্কারের চেষ্টা।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়টি ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পরে ১৯৯৩ সালে পাঁচটি পাকা শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৫ সালে আবারও দুটি নতুন পাকা কক্ষ নির্মাণ করা হয়।

মোট সাতটি কক্ষের মধ্যে পুরাতন পাঁচটি কক্ষে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান এবং নতুন দুটি কক্ষের একটিতে অফিস, অপরটিতে পাঠদান কার্যক্রম চলে। 

সব শ্রেণি মিলিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় ২শ শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক ও কর্মচারী মিলে দশ জন রয়েছেন। ২০১১ সালের পর থেকে পুরাতন ভবনে নানা সমস্যা দেখা দিতে থাকে।

২০১৩ সালের ১৮ জুন পুরাতন ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পরও নতুন ভবন না হওয়ায় পুরাতন ভবনেই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান।

পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া সুরাইয়া আক্তার বৃষ্টি বলেন, ‘স্কুলের দেওয়ালগুলো ফাটা। ছাদ থেকে সিমেন্ট খুলে পড়ে। এখন বৃষ্টি-বাদলের সময়। বৃষ্টি হলে ছাদ দিয়ে পানি পড়ে, আমরা ভিজে যাই। অনেক কষ্টে পড়াশোনা করছি।’

কল্পনা নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘ছেলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। তাকে স্কুলে পাঠাতে ভয় লাগে। স্কুলের ভবন ভাঙা, নানা সমস্যা রয়েছে। আমরা অতি দ্রুত ভালো একটি ভবন চাই।’

প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ে দুটি ভবন রয়েছে। পুরাতন ভবনের অবস্থা খুবই খারাপ। ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পরও নতুন ভবন না হওয়ায় বাধ্য হয়েই ক্লাস পরিচালনা করতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে দ্রুত একটি নতুন ভবনের ব্যবস্থার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার আবেদন করেছি।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দীকুর রহমান বলেন, পরিদর্শনে গিয়ে দেখি প্রতিষ্ঠানটির ভবন পাঠদানের অনুপযোগী। যতদূর জেনেছি, ইঞ্জিনিয়ার সেটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছিলেন। পরে সেটা কেন বাস্তবায়ন হয়নি—তা জানা নেই।

তিনি বলেন, এরই মধ্যেই বিভিন্ন স্কুলের জন্য নতুন ভবনের তালিকা পাঠিয়েছি, সেখানে ওই প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুরুর আলম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির জন্য গত ২০১৭-১৮ সালে একটি বরাদ্দ এসেছিল। সীমানা জটিলতার কারণে সেটি ফেরত চলে যায়। প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে।’