ঢাকা বুধবার, ০৭ মে, ২০২৫

‘শিরক’ আখ্যা দিয়ে কাটা হলো শতবর্ষী বটগাছ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ৬, ২০২৫, ১০:২৯ পিএম
মাদারীপুরে একটি শতবর্ষী বটগাছকে ‘শিরক’ আখ্যা দিয়ে কেটে ফেলা হয়। ছবি- সংগৃহীত

মাদারীপুরে ‘শিরক’ আখ্যা দিয়ে শতবর্ষী একটি বটগাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

শনিবার (৩ মে) দুপুরে সদর উপজেলা আলম মীরার কান্দি এলাকায় গাছটি কাটেন স্থানীয় কিছু লোক।

এ ঘটনার ১৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে বটগাছ কেটে ফেলার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে সদর উপজেলা আলম মীরার কান্দি এলাকায় শতবর্ষী একটি বটগাছের শিকড়, ডালসহ বড় একটি অংশ কাটা হয়।

শতবর্ষী বটগাছটির গোঁড়ায় স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের মানুষ মোমবাতি জ্বালিয়ে মানত করতেন, মনোবাসনা পূরণে লাল কাপড় বেঁধে রাখতেন। এসব কর্মকাণ্ডকে শিরক আখ্যা দিয়ে কিছু লোক গাছটি কেটে ফেলেন।

এ ঘটনার পর মাইনুল ফয়সাল নামে এক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘শিরক করল কারা আর ক্ষতিগ্রস্ত হলো কে? গোটা জাতি এতটা অশিক্ষিত কী করে হয়, আমার মাথায় ঢোকে না। বটগাছের অপরাধ কী?’

সোহেল সিকদার নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘প্রচণ্ড রোদে অনেকে এই গাছের ছায়ায় বসে থাকত। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি পাখির অভয়ারণ্য এ গাছ। এভাবে গাছটি কেটে ফেলা ঠিক হয়নি।’

তবে গাছ কাটার পক্ষ নিয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘এই বটগাছের গোঁড়ায় মিষ্টি দেয়, শিরনি দেয়, লাল কাপড় বেঁধে রাখে লোকজন। গাছকে কেউ মনে করে সৃষ্টিকর্তা বা দেবতা, যা শিরক ও গুনাহর কাজ। এই গুনাহর কাজ যাতে না হয়, সে জন্য স্থানীয়রা গাছটি কেটেছেন।’

তিনি বলেন, ‘এত বড় গাছ যে পরিমাণে অক্সিজেন দেয়, তা আমাদের ও পরিবেশের জন্য বড় উপকারী, তা আমরা জানি। আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করেছি, এখানে তিনটি গাছ রোপণ করব। আমরা জমির মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি গাছটি কাটার বিষয়ে। তিনি আমাদের বলেছেন, যেহেতু গাছটির জন্য গুনাহ হচ্ছে, তাই কেটে ফেলেন। আমাদের মসজিদে ১৫০০ টাকা দিয়েন।’

মাদারীপুর বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গির আলম খান বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়েছি। আশপাশের অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে আগে যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে গাছটি কাটার পরিকল্পনা হয়েছিল, তা অস্বীকার করছেন গাছ মালিক।

‘জমির মালিক সত্তর হাওলাদার বলেছেন, গাছ তিনি ১৫০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। আমার ধারণা, ঘটনা আগেরটা ঠিক, তবে জমির মালিককে ম্যানেজ করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি এবং তদন্ত করা হচ্ছে।’ 

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোসা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘বিষয়টি জেনে সেখানে লোক পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’