বর্ষা মানেই কখনো হালকা, কখনো মুষলধারে বৃষ্টি। এ সময়ে ঘরের বাইরে পা রাখতেই প্রথম যে জিনিসটি দরকার, তা হলো ছাতা। কিন্তু পুরোনো ছাতা যদি ফুটো হয়ে যায় বা ভেঙে পড়ে তখন সেটি ফেলে না দিয়ে অনেকেই ছুটে যান ছাতা মেরামতের কারিগরদের কাছে। বছরজুড়ে উপেক্ষিত থাকা এই কারিগরদের কদর তখন হঠাৎ করেই বেড়ে যায়।
একসময় ছাতা তৈরি ও মেরামতের পেশা ছিল একান্ত গ্রামীণ জীবনের অংশ। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিক ও কম দামের ছাতার প্রচলনে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।
তবু বর্ষা মৌসুম এলে হাতেগোনা কিছু কারিগর আবারও ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বাজারে হাটের দিনে তারা ছাতা মেরামতের ছোট ছোট দোকান বা স্টল বসিয়ে কাজ করেন।
যদিও বছরের অন্য সময়ে ছাতা মেরামতের তেমন চাহিদা থাকে না, বর্ষাকালে এই পেশায় জেগে ওঠে প্রাণ। ভাঙা ছাতা নিয়ে মানুষ হাজির হন বাজারে বসা কারিগরদের কাছে। ফলে ছাতার কারিগরদের হাতে তখন নেমে আসে ব্যস্ততা।

সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা বাজারে দেখা মেলে কারিগর আনন্দ দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন আয় একরকম থাকে না। হাটবারে আয় ভালো হয়। গত শনিবার দুই হাজার টাকা আয় হয়েছিল। তবে আজ তেমন আয় হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগে কাঠের হাতাওয়ালা ছাতার বেশ প্রচলন ছিল। এখন সেগুলো নেই বললেই চলে। ফলে ছাতা তৈরি বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই তাই পেশা ছেড়ে অন্য কাজ বেছে নিয়েছেন।’
তালা উপজেলার ছাতা মেরামতকারী সুনীল দাস জানান, ‘এ অঞ্চলে ছাতা মেরামতের কারিগর ছিল খুবই কম। অন্য জেলা বা উপজেলা থেকে এসে হাটে-ঘাটে কাজ করতেন কারিগররা। বর্ষাকালে কিছুটা কদর বাড়লেও মৌসুম শেষে কাজ আর থাকে না। তখন অন্য পেশায় চলে যেতে হয়।’
কালিগঞ্জ বাজারের মাধব রায় বলেন, ‘বৃষ্টিপাত হলে কাজ বাড়ে, আয়ও একটু ভালো হয়। কিন্তু বাকি সময় বসে থাকতে হয়। ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করে, সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এ পেশায় আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আর আসবে না, সেটাই বাস্তবতা।’
জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার বলেন, ‘ছাতা মেরামতকারী কারিগরদের স্বল্পসুদে ঋণ দিয়ে তাদের ব্যাবসা স্থায়ীভাবে চালু রাখার পরিকল্পনা করা যেতে পারে, যেন তারা একটি স্থায়ী দোকান খুলে এই কাজকে বড় আকারে চালিয়ে যেতে পারে এবং সংসারও চালাতে পারে।’
আপনার মতামত লিখুন :