টেলিভিশন আর মোবাইল আড্ডার যুগে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার নলিন বাজারের চা বিক্রেতা সুজন মিয়া।
যমুনার পাড়ে তার ছোট্ট চায়ের দোকান এখন শুধুই আড্ডার জায়গা নয়—এটি হয়ে উঠেছে একটি পাঠাগার। এখানে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বইয়ের পাতায় ডুব দেন স্থানীয়রা।
‘ময়না মুক্ত পাঠাগার’ নামের এই ক্ষুদ্র পাঠাগারটি গড়ে উঠেছে সুজনের দোকানের এক কোনায়। পাঠাগারে রয়েছে শতাধিক বই, যার মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ, বাংলা সাহিত্যের ক্লাসিক, ইতিহাস ও বিশ্বসাহিত্যের নানা রচনা।
এ উদ্যোগে সহযোগিতা করেছে ছায়ানীড় প্রকাশনী ও সম্মিলিত পাঠাগার আন্দোলনসহ একাধিক সংগঠন।
সুজন বলেন, ‘দেখতাম দোকানে আসা তরুণরা টেলিভিশন বা মোবাইলে মগ্ন। আমি চেয়েছি, তারা যেন এই সময়টা বই পড়ে কাজে লাগায়। চিন্তা করে এক কোণে পাঠাগার গড়ে তুলি।’

এই উদ্যোগের পেছনে অনুপ্রেরণা দেন নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধা আনজু আনোয়ারা ময়না। তার নাম অনুসারেই পাঠাগারের নামকরণ।
পাঠাগারের উদ্বোধনী আয়োজনে ছায়ানীড়ের নির্বাহী পরিচালক মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘বই পড়ে তা নিয়ে চিঠি লেখার মাধ্যমে পাঠকদের উৎসাহিত করতে সেরা ১০ চিঠির লেখককে পুরস্কার দেওয়া হবে।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, এই চায়ের দোকানে টেলিভিশন নেই, আছে বইয়ের ঘ্রাণ। স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাহিত্যপ্রেমী তরুণ, এমনকি বয়স্করাও বই পড়তে আসছেন এখানে।
স্থানীয় শিক্ষার্থী রমজান ও ব্যবসায়ী রফিক বলেন, ‘এই ছোট দোকানে এমন আয়োজন কল্পনাও করিনি। এখন চায়ের ফাঁকে বই পড়াই অভ্যাস হয়ে গেছে।’

এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে ছায়ানীড় ছাড়াও পাশে দাঁড়িয়েছে গ্রাম প্রকাশনী, পাঠাগার ৭১, আলোকিত পাঠাগার, শুভশক্তি বাংলাদেশ, বৈরাণ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদ এবং রনলা সাহিত্য সংসদ।
সুজন মিয়া দেখিয়েছেন, সমাজ পরিবর্তনের জন্য বিশাল জায়গা বা পুঁজি নয়, প্রয়োজন হৃদয়ের উদ্যোগ। তার ‘ময়না মুক্ত পাঠাগার’ এখন শুধু বই রাখার জায়গা নয়, এটি হয়ে উঠেছে সমাজ গঠনের কেন্দ্রবিন্দু। যমুনার পাড় থেকে ছড়িয়ে পড়া এই আলোর বার্তা অনুপ্রাণিত করছে দেশের নানা প্রান্তের মানুষকে।
আপনার মতামত লিখুন :