গুঁড়া দুধের অপ্রয়োজনীয় প্রেসক্রিপশন দিয়ে একটি অনিয়মিত বাণিজ্য গড়ে উঠেছে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে। অভিযোগ রয়েছে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবিকারা রোগীর স্বজনদের হাতে নির্দিষ্ট কোম্পানির গুঁড়া দুধের প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দিচ্ছেন। ফলে প্রয়োজন না থাকলেও রোগীর আত্মীয়দের দুধ কিনতে বাধ্য হতে হচ্ছে।
বিশেষ করে হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড, লেবার ওয়ার্ড, গাইনি ওয়ার্ড এবং পেইং ওয়ার্ডে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক রোগী স্বাভাবিকভাবে খাবার খেতে পারলেও গুঁড়া দুধের স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব দুধের দাম কোম্পানি ভেদে প্রতি কৌটা ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আনিকা জানান, ‘গত ২ আগস্ট রাতে তার মাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং ৪ আগস্ট ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ছাড়পত্র নিতে গেলে সেবিকারা ভিটাফ্যাটস নামে একটি কোম্পানির গুঁড়া দুধের প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দেন। অথচ তার মা স্বাভাবিকভাবে মুখে খাবার খেতে পারছিলেন।’
একাধিক রোগীর স্বজন অভিযোগ করেছেন, সেবিকাদের প্রভাব ও চাপের মুখে তারা অকারণে দুধ কিনতে বাধ্য হন। অনেকে বিষয়টি বুঝলেও রোগীর চিকিৎসা নিয়ে ঝামেলা এড়াতে প্রতিবাদ করতে পারেন না।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সব রোগীর জন্য দুধের স্লিপ দেওয়া অনুচিত। মুখে খাবার খেতে না পারা রোগীদের জন্য চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে তরল খাদ্যের পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়া কোনো সেবিকা নিজ ইচ্ছামতো দুধের প্রেসক্রিপশন দিলে তা স্পষ্টতই অনিয়ম।’
রোগীর স্বজন আতিয়ার রহমান, জয়নাল আবেদীন, কুলসুম বেগম ও রোদেলা ইসলাম জানান, গুঁড়া দুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ওয়ার্ডে গিয়ে সেবিকাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং নিজেদের কোম্পানির নাম লেখা ছোট ছোট স্লিপ দিয়ে যান। এসব স্লিপ পরে রোগীর ছাড়পত্রের সঙ্গে স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত বলেন, ‘চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়া সেবিকারা যদি গুঁড়া দুধের প্রেসক্রিপশন দিয়ে থাকেন, তা অবশ্যই অনিয়ম। বিষয়টি আমি আগে জানতাম না। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন