মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে হত্যাচেষ্টার মামলার আসামিকে ধরছে না পুলিশ। বরং উল্টো ভুক্তভোগীকে হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজারের রামু থানার পুলিশের এসআই মো. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে। হত্যাচেষ্টা মামলা দায়েরের পর দীর্ষ সাড়ে তিন মাসেও মামলার প্রধান আসামি খোকন বড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো ভুক্তভোগীকেই হয়রানী করছে পুলিশ বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় কক্সবাজার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী জিটু বড়ুয়া।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পরোয়ানাভুক্ত এই আসামীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণের বিনিময়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রামু থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. কামাল হোসেন মূল মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার না করে বরং পাল্টা মামলায় ভিকটিমদের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন।
শনিবার (১১ অক্টোবর) ভুক্তভোগী জিটু বড়ুয়া কক্সবাজার পুলিশ সুপারের কাছে তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, মামলার অগ্রগতি না হওয়ায় তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
জিটু বড়ুয়া কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের হাজারীকুল গ্রামের বাসিন্দা। তার অভিযোগ, গত ২৪ জুন খোকন বড়ুয়ার নেতৃত্বে আরও কিছু সন্ত্রাসী ভাড়াটে তাকে এবং তার বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে। ঘটনার দুই দিন পর তিনি রামু থানায় খোকন বড়ুয়া ও আরও দুই জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার ২ ও ৩ নম্বর আসামী জামিন পেয়েছেন, কিন্তু প্রধান আসামী খোকন বড়ুয়া এখনও পলাতক।
জিটু বড়ুয়া জানান, খোকন বড়ুয়া হামলার ঘটনাকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজীর অভিযোগ করে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। দুটি মামলার তদন্তকারী অফিসার নিযুক্ত হন রামু থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ কামাল হোসেন।
জিটু বড়ুয়া অভিযোগ করেন, চাঁদাবাজীর মামলায় প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেন এসআই কামাল। ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে, জিআর মামলার প্রতিবেদন দাখিলের আগে সিআর মামলায় বিজ্ঞ আদালতে মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন দেন। এতে ঘুষ দাবীর বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
জিটু বড়ুয়ার বাবা শিবু বড়ুয়া বলেন, প্রধান আসামীকে আটক না করে এসআই কামাল মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছেন, ফলে তারা অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
চাঁদাবাজীর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে ১১ জুলাই রামু থানার সামনে মানববন্ধনও অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, হামলার ঘটনা মূলত বাড়ি ও ভিটার জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে ঘটেছে, চাঁদা দাবী সম্পূর্ণ সাজানো।
এসআই কামাল হোসেন বলেন, তিনি খোকন বড়ুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে ঘটনার বিস্তারিত জেনেছেন। কেন তাকে আটক করা হয়নি, জানতে চাইলে বলেন, জিআর মামলায় আসামীর পরোয়ানা থাকার বিষয়টি আগে জানতেন না। ঘুষ দাবীর বিষয়টি অস্বীকার করে দুটি মামলার প্রতিবেদন আদালতে পাঠানো হয়েছে।
রামু থানার ওসি আরিফ হোসাইন বলেছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে রামু থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ফরিদ এ ঘটনার বিষয়টি দুঃখজনক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন শাহীন বলেন, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা হবে।
এর আগে জিটু বড়ুয়া ও তার বাবার উপর হামলার মামলার তদন্তভার পেতেন রামু থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) চিরঞ্জিব বড়ুয়া। অন্য একটি মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১ লাখ টাকা ঘুষ দাবীর অডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর তাকে রামু থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন