ঢাকা রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

ধ্বংসের মুখে প্রাচীন স্থাপনা অযোধ্যা মঠ

মেহেদী হাসান নয়ন, বাগেরহাট
প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৪, ০৯:১৬ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাগেরহাট: বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার উত্তরে রয়েছে প্রাচীন অযোধ্যা মঠ। কোদলা মঠ নামে পরিচিত এই প্রাচীন স্থাপনা বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুরে অবস্থিত। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হলেও অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে স্থাপনাটি।

সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রাচীন এই স্থাপনা। মঠের উপরিভাগের অনেকটা জায়গা জুড়ে বেড়ে উঠেছে গাছ-গাছালি। স্থাপনা প্রাঙ্গনে বিচরণ করে গরু-ছাগল। দেয়ালে শুকানো হচ্ছে কাপড়। এ অবস্থায় দ্রুত প্রাচীন এই ঐতিহ্যকে সংস্কার করে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন দর্শনার্থী ও স্থানীয়রা।

সরেজমিনে ঘুরে ও বিভিন্ন তথ্যের আলোকে জানা যায়, অনিন্দ্যসুন্দর এ মঠটি নির্মিত হয়েছে বর্গাকার ভূমি পরিকল্পনায় চতুষ্কোণ বিশিষ্ট ভিতের ওপর। এর উচ্চতা আনুমানিক ১৮.২৯ মিটার। ইটের তৈরি মঠের প্রাচীরগুলির পুরুত্ব ৩.১৭ মিটার এবং ভেতরের বর্গাকার প্রত্যেক দেয়ালের দৈর্ঘ্য ২.৬১ মিটার। মঠের ভেতরের অংশে ১২/১৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা গুম্বুজ ফাঁকা তলদেশের আকারে ওপরে উঠে গিয়ে শেষ হয়েছে। 

মঠে প্রবেশের মোট ৩টি পথ। ধারণা করা হয় দক্ষিণ দিকের প্রবেশ পথটিই ছিল মূল ফটক। বাকি প্রবেশপথ ২টি পূর্ব ও পশ্চিম দিকে। প্রবেশ পথগুলো মূলত ‘করবেল’(পরপর ইট সাজিয়ে) পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে। প্রবেশপথগুলোর ওপরে পোড়া মাটিতে খোদাই করা লতা-পাতা, ফুল ইত্যাদি এখনো দৃশ্যমান।

ভেতরের দিকে প্রায় তের ফুট পর্যন্ত লম্বা গম্বুজ ওপরের দিকে উঠে গেছে। অযোধ্যা মঠের নির্মাণকাল নিয়ে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থাপত্যিক বৈশিষ্টানুসারে অনুমান করা হয় এটি ষোড়শ শতাব্দীর শেষের দিকে কিংবা সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে নির্মিত। উড়িষ্যা অঞ্চলে খ্রীষ্টিয় ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত যে ‘রেখা’ নমুনার মন্দির নির্মাণ পদ্ধতি দেখা যায় তার প্রভাব এ মঠে আছে বলে ধারণা করা হয়।

মঠের দক্ষিণ কার্নিশের নিচে প্রায় অদৃশ্যমান দুই লাইনের একটি ইটে খোদাই করা লেখা আছে। স্থানীয় মতে লেখাটি ‘শর্মনা উদ্দিশ্য তারকং (ব্রক্ষ্ম)

দোহাং বিনির্মিত। এই লেখার সঠিক অর্থ নিরুপণ করা সম্ভব না হলেও যতদূর পাঠোদ্ধার করা যায় তা থেকে জানা যায় সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে দেবতার অনুগ্রহ লাভের আশায় কোনো এক ব্রাহ্মণ মঠটি নির্মাণ করেছিলেন।

এ ছাড়া জনশ্রুতি আছে রাজা প্রতাপাদিত্য তার গুরু অবিলম্ব সরস্বতীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই মঠ নির্মাণ করেন। মঠ প্রাঙ্গনে কথা হয় যশোর থেকে ঘুরতে আসা সুচিত্রা রাণি পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শহর বাগেরহাটে ঘুরতে এসেছি। সকাল থেকে বেশ কয়েকটি স্থাপনা ঘুরে দেখে বিকেলে অযোধ্যার মঠ দেখতে আসলাম। কিন্তু এখানে না আছে নিরাপত্তা না আছে সংরক্ষণের উদ্যোগ। স্থাপনা প্রাঙ্গনে গরু-ছাগল চরছে। স্থানীয়রা কাপড় শুকাচ্ছে। পরিবেশ একটুও দর্শনার্থীবান্ধব নয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উচিত দ্রুত প্রাচীন এই নিদর্শন সংরক্ষণ করা।

বাগেরহাট প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ বলেন, মঠটি আমাদের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। আগে মঠের দেখভালের জন্য মাস্টার রোলে একজন লোক দায়িত্ব পালন করত। এক বছর আগে তার স্থায়ী চাকরি হওয়ায় অন্যত্র চলে যায়। এরপর থেকে লোকবল না থাকার কারনে স্থাপনাটি কিছুটা অরক্ষিত রয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের মাসিক সমন্বয় সভায় আমাদের আলোচনা হয়েছে। লোকবল নিয়োগের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন বলেন, বাগেরহাটকে পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তুলতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। অযোদ্ধার মঠসহ প্রত্যেকটি পর্যটন কেন্দ্রের শোভা বর্ধন, আবাসন ব্যবস্থা, মানসম্মত খাবার, বিপনন কেন্দ্র, সহজ যাতায়াত, সার্বিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।