ঢাকা রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫

কাঠের পাটাতনে ২০ গ্রামের চলাচল, এখন যেন মৃত্যুফাঁদ

আহাদ তালুকদার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল)
প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২৫, ০৭:৩১ পিএম
ওয়াপদা খালের ওপর নির্মিত আয়রন ব্রীজটি দিয়ে ঝুঁটি নিয়ে চলাচল। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের ভদ্রপাড়ার ওয়াপদা খালের ওপর নির্মিত আয়রন ব্রীজটি এখন যেন মৃত্যুফাঁদ। মাঝখানে বিশাল গর্ত, দুপাশের রেলিং নেই—এই ব্রীজ দিয়েই প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন ২০ গ্রামের হাজারো মানুষ, শত শত শিক্ষার্থী ও যানবাহন।

প্রায় এক দশক ধরে স্থানীয়রা নিজেদের উদ্যোগে কাঠের পাটাতন বসিয়ে চলাচলের পথ তৈরি করলেও ব্রীজটি সংস্কারে উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তালের বাজার-রথখোলা সড়কের বুকে ৩০ বছর আগে এলজিইডির অর্থায়নে নির্মিত হয় ৯০ ফুট দৈর্ঘ্যের আয়রন ব্রীজটি। প্রথম দুই দশক ভালোই ছিল, কিন্তু তারপর একে একে ভেঙে পড়ে ঢালাই, বের হয়ে আসে রড, ভেঙে যায় রেলিং।

চলাচল অনিরাপদ হয়ে উঠলেও এলজিইডির পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি কোনো মেরামতের উদ্যোগ। বাধ্য হয়ে স্থানীয়রাই কাঠ দিয়ে গর্ত ঢেকে চলাচলের ব্যবস্থা করে রেখেছে।

 

সেতুটি দিয়ে একসঙ্গে দুটি যানবাহনের পারাপারের সুযোগ না থাকায় কে আগে যাবেনএ নিয়ে কথা বলছেন মোটরসাইকেল চালক ও ভ্যানচালক। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ 

এই ব্রীজ দিয়ে প্রতিদিন স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। করমআলী সিকদার বিদ্যাপীঠ, সরকারি গৈলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মোল্লাপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত ৬-৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের এই সেতুই পারাপারের একমাত্র উপায়।

কোনো রেলিং না থাকায় একটু অসাবধানতায় ঘটে যেতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। বিশেষ করে রাতের বেলায় সেতুতে চলাচল আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। গেল মাসে দুর্ঘটনায় সেতুটিতে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তির আহত হন বলে জানা গেছে।

যানবাহনের চালকরাও রয়েছেন উৎকণ্ঠায়। ভ্যানচালক সুব্রত হালদার বলেন, ‘প্রতিদিন যাত্রী আর মালামাল নিয়ে এই ঝুঁকির ব্রীজ দিয়ে যাতায়াত করি। একাধিকবার দুর্ঘটনার মধ্যে পড়েছি। কিন্তু এ ছাড়া কোনো রাস্তা নেই।’

ওয়াপদা খালের ওপর নির্মিত আয়রন ব্রীজটি দিয়ে হেঁটে পার হচ্ছে এক কিশোর। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজ সরদার বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর ধরে এই অবস্থা। কাঠ দিয়ে বারবার মেরামত করতে করতে আমরা ক্লান্ত। আর পারছি না। দ্রুত নতুন ব্রীজ নির্মাণ করা হোক—এটাই আমাদের প্রাণের দাবি।’

তবে আশার আলো দেখাচ্ছে সাম্প্রতিক প্রশাসনিক উদ্যোগ। আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রকৌশলী রবীন্দ্র চক্রবর্তী জানান, ঢাকার এলজিইডির প্রধান কার্যালয় থেকে আইবিআরপি প্রকল্পের পরিচালক শরীফ মো. জামাল উদ্দিন ব্রীজটি পরিদর্শনে এসেছেন। ইতোমধ্যে নকশার কাজ শেষ পর্যায়ে। এরপর বরিশাল অফিস থেকে টেন্ডার আহ্বান করা হবে।