ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫

পথভোলা অন্ধ শিশুর পাশে দাঁড়ালেন কক্সবাজারের ইউএনও

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২৫, ১২:৪০ এএম
অন্ধ শিশুর পাশে কক্সবাজারের ইউএনও। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ।

অন্ধকারেই তার পৃথিবী। মাত্র ৭ বছরের ছোট্ট এক কন্যা শিশু- চোখে আলো নেই বললেই চলে। তবুও সে হাঁটছিল… পথ চিনে না, গন্তব্য জানে না। এমন সময় পথ ভুলে সে পৌঁছে যায় কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অফিসে।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) কক্সবাজার সদর উপজেলায় এ ঘটনাটি ঘটে।

অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে প্রথমে বিষয়টি কিছুটা রহস্যময় মনে হলেও, আলাপচারিতায় জানা যায়- তার পরিবারে পাঁচজন সদস্যের চারজনই অন্ধ। দুই বছর আগে বাবা লিভার ক্যান্সারে মারা যাওয়ার পর মায়ের স্নেহেই চলছে তাদের বেঁচে থাকা।

শিশুটির সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী। শিশু তো বটেই, সে যেন তারই সন্তান- এমন স্নেহে নিজের গাড়িতে করে তাকে নিয়ে যান চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেন প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চশমা। আর সেই মুহূর্তেই বিস্ময়- চশমা চোখে দিতেই ছোট্ট মেয়েটি হালকা আলো দেখতে পায়; যেন তার জীবনে জ্বলে ওঠে নতুন প্রভাতের আশার দীপ।

সেখানেই শেষ নয়। শিশুটিকে নিজের হাতে কিনে দেন টুকটুকে লাল একটি জামা, একটি ধুতি-জামা এবং দুই জোড়া জুতা। আনন্দে মুখভরা হাসি, চোখভরা স্বপ্ন- ছোট্ট মেয়েটির উচ্ছ্বাসেই যেন বদলে গেল চারপাশের পরিবেশ।

এদিকে, কক্সবাজারের ঈদগাঁও পূর্ব পোকখালী চরপাড়া (৯নং ওয়ার্ড) এলাকায় অবস্থিত তার বাড়িতে খবর পৌঁছে দেওয়া হয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যানের মাধ্যমে। কিছুক্ষণ পর স্থানীয় গ্রাম পুলিশসহ সেখানে এসে পৌঁছান তার মা।

এরপরের দৃশ্য- অশ্রুভরা, আবেগমাখা ও ভালোবাসায় পূর্ণ। ইউএনও নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী ছোট্ট শিশুটিকে নিজ হাতে তার মায়ের কাছে তুলে দেন। সন্তানের স্পর্শ পেয়ে মা কেঁদে ফেলেন, আর উপস্থিত সবাই নিঃশব্দে অনুভব করেন মানবতার এক নির্মল সৌন্দর্য।

এ যেন সত্যিকারের মানবিকতার দৃষ্টান্ত- প্রশাসনিক দায়িত্বের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও মমতার এক উজ্জ্বল নিদর্শন।

কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী প্রমাণ করলেন- অন্ধকার যত গভীরই হোক, একজন মানুষ চাইলে অন্যের জীবনে আলো হয়ে উঠতে পারে।