ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৫

আগৈলঝাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালবিরোধী সতর্কতা, বিভ্রান্তিতে রোগীরা

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৫, ০৩:৩৮ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা দালাল ও প্রতারক চক্রের কারণে বিভ্রান্তি এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কিছু দালাল রোগীর ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ছবি তুলে নেয় এবং নির্দিষ্ট বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠানোর জন্য প্ররোচিত করে। এমনকি কিছু রোগীকে বাইকে করে ক্লিনিকে পৌঁছে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকলেও দালালদের হস্তক্ষেপে রোগীরা প্রাইভেট ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এক পরীক্ষার জন্য রোগীর ৪-৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়, যার একটি অংশ ডাক্তার ও ক্লিনিকের কমিশন হিসেবে দালালদের কাছে চলে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পার্শ্ববর্তী দুই উপজেলা গৌরনদী-আগৈলঝাড়া ঘিরে গড়ে উঠেছে বেসরকারি বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডাক্তারের চেম্বার। এসব ক্লিনিক ও চেম্বারকে কেন্দ্র করে দালাল ও প্রতারক চক্র অবাধে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

একাধিক রোগীদের স্বজন অভিযোগ করে বলেন, সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকলেও দালালদের খপ্পরে পড়ে সেবা নিতে হচ্ছে প্রাইভেট ক্লিনিক অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। স্থানীয়রা এই চক্রের হাতে পড়েন না।

তবে বাইরে থেকে কোনো রোগী এলে রোগীদের ভালোমন্দ জিজ্ঞাসা করে পটিয়ে ফেলেন। তারপর নিয়ে যান নির্ধারিত ক্লিনিকে। ডাক্তার রোগীকে দেখে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ভিজিট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজ ধরিয়ে দেন। আর এই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ৪-৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এখানেও সেই ডাক্তারের কমিশন মেলে।

সপ্তাহ, মাস ওষুধ খেয়েও কোনো উপকার হয় না রোগীর। ফলে ফের এলে জানতে পারেন ওই ডাক্তারের হাত ভালো না। আপনি দালাল ও প্রতারকের হাতে পড়েছেন। তারপর ভুক্তভোগীরা ডাক্তার ও ওষুধ বদল করেন। ততদিনে যা ক্ষতি হবার তা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দালাল ও প্রতারক জানান, এলাকায় ঘুরঘুর করি কোনো রোগী পেলে আমাদের নির্দিষ্ট ক্লিনিকে নিয়ে যাই । বিনিময়ে ২০০ টাকা পাই।

এসব কর্মকাণ্ডে প্রতিষ্ঠিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো দালাল এবং প্রতারক থেকে সাবধান থাকার জন্য সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন। তবুও অজানা জায়গায় এসে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন রোগীরা। ফলে আরোগ্যের স্থলে জটিল হচ্ছে রোগীদের রোগ।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোর্শেদ সজীব জানিয়েছেন, দালালদের তালিকা তৈরি করে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

তিনি রোগীদের সচেতন থাকার আহ্বান জানান এবং বলেন, হাসপাতালের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে, যাতে রোগীরা বাইরে ক্লিনিকে না যান।

উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারও দালালবিরোধী সতর্কতার জন্য সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে, তবে অজানা রোগীরা এখনো প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।