ঢাকা মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫

পঁয়ত্রিশ বছরে ৪ হাজার লাশ কেটেও থামছেন না ভোলার ডোম লাল

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২০, ২০২৫, ০১:২৪ পিএম
ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ডোম ভানু লাল। ছবি- সংগৃহীত

ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ডোম ভানু লাল (৫৪) দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে লাশ কাটার পেশায় যুক্ত রয়েছেন। কেটেছেন নারী-শিশু পুরুষসহ প্রায় ৪ হাজার মানুষের মরদেহ।

মাত্র ১২ বছর বয়সে বাবা গনেশ লাল ডোমের হাত ধরে প্রথম মর্গের পথচলা তার। ১৯৮৯ সালে ভোলা সদর হাসপাতালে যোগ দিয়ে ১৯৯০ সালেই সরকারি রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত হন। সেই থেকে একটানা তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি এই কাজ করে যাচ্ছেন।

ভানু লাল বলেন, আমরা জাতিগতভাবে হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ। লাশ কাটা আমাদের বংশগত পেশা। ৪ হাজার মানুষের লাশ কেটেছি, ভবিষ্যতে আরও কাটব।  

তিনি আরও বলেন, এই জেলার একমাত্র ডোম আমি। ১০টি থানা থেকে মরদেহ আসে এখানে। রাত হোক বা দিন, ডাকলেই আমি আসি। ভয় পাওয়ার সময় নেই। লাশের চেহারা দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। 

ময়নাতদন্ত নিয়ে সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণা নিয়ে তিনি জানান, অনেকে বলেন লাশের অঙ্গ রেখে দেওয়া হয়, কিন্তু এটা ভুল ধারণা। চিকিৎসকের নির্দেশনায় ও প্রয়োজনে শুধু পরীক্ষার জন্য কিছু অংশ রাখা হয়। তবে সবই নিয়ম মেনে করা হয়। লাশের স্বজনেরা অনেকে অনুরোধ করে বলেন ভালোভাবে সেলাই করে দিন, প্যাকেট করে দিন।  

তিনি আরও জানান, পোস্টমর্টেমে কম কাটার অনুরোধও পাওয়া যায়। কিন্তু সে সুযোগ নেই। নিয়ম মেনেই ময়নাতদন্ত করা হয়। 

অনেকে ডোমদের ছোট চোখে দেখে সমাজে এমন ধারণা থাকলেও ভানু লাল জানান, ভোলাবাসীর ভালোবাসায় তিনি আপ্লুত। লোকজন সম্মান করে, পাশে দাঁড়ায়। ভবিষ্যতে হরিজন সম্প্রদায়ের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডোম পদ সংরক্ষিত করা হোক।

স্থানীয় বাসিন্দা আবির, রাশেদ ও রাসেল বলেন, শৈশব থেকেই দেখছি যখনই মর্গে লাশ আসে তিনিই প্রথম ছুটে আসেন। স্বজনরা কাঁদছেন এমন অবস্থায় ভানু লাল সবার সঙ্গে কথা বলেন, শান্ত করেন। মানুষটা খুব মানবিক। 

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তায়েবুর রহমান বলেন, ভানু লাল নিষ্ঠার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। চিকিৎসকের উপস্থিতিতেই ময়নাতদন্ত হয়। যেসব আধুনিক যন্ত্রপাতির দরকার পড়ে, সেগুলো তাকে আমরা সরবরাহ করি।