ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার মগেনা নদীর তীরবর্তী একটি স্লুইসগেটের সংলগ্ন বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কয়েক হাজার মানুষ ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেল ৩টার দিকে এই বাঁধটি ভেঙে যায়। এতে উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের দড়িচাঁদপুর, কয়োমুল্যাহ, কাঞ্চনপুর, গুরন্দিয়া, চাঁচড়া ও কাটাখালীসহ দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁধ ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানির স্রোত গ্রামে ঢুকে পড়লে মুহূর্তেই শত শত বাড়িঘর, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়।
এদিকে স্লুইসগেটের মুখে থাকা ছয়টি ঘর ভেঙে পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে আতঙ্কে অনেক পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নির্মাণাধীন এই স্লুইসগেটের কাজ সময়মতো শেষ না হওয়ায় এবং নির্মাণে গাফিলতির কারণে বাঁধটি দুর্বল হয়ে পড়েছিল।
জানা যায়,উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল চর মুজাম্মেলসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তীব্র বাতাস ও পানি বৃদ্ধির কারণে চরের মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘বহুবার ঠিকাদার আর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলছি, কাজটা ঠিকমতো করেন। কেউ শোনেনি। আর এখন আমাদের সর্বনাশ হলো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, ‘স্লুইসগেটের নির্মাণের জন্য সংরক্ষিত মাটি স্থানীয় কিছু নেতা ও ঠিকাদারের যোগসাজশে কেটে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আমরা বাধা দিতে গেলে হুমকি দিয়েছে। সেই মাটি বাঁধে ব্যবহার হলে আজ এই দুর্যোগ হতো না।’
এদিকে স্লুইসগেট বাঁধ ভাঙার খবর পেয়ে বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে করেন তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুভ দেবনাথ। এ সময় তিনি বলেন, ‘বাঁধ ভেঙে বহু মানুষ বিপাকে পড়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং জরুরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’
এরই মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি সহায়তা হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে ৫০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশফাউদ দৌলা বলেন, ‘ভাঙনকবলিত এলাকায় আমি গিয়েছি। ঝুঁকিমুক্ত টেকসই বড় বাঁধ নির্মাণে জিও ব্যাগ, ব্লক ও মাটি নিয়ে অনেক লোকজন কাজ করছে। যতক্ষণ পর্যন্ত ঝুঁকিমুক্ত বাঁধ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কাজ চলবে।’