শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ০৫:৫২ পিএম

ভূমিহীন কৃষকদের শত একর জমি প্রভাবশালীদের দখলে

চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ০৫:৫২ পিএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পরিবর্তনের পর ভোলার চরফ্যাশনের  মুজিবনগর ইউনিয়নের ১০০ একর কৃষি জমি অবৈধভাবে জোরপূর্বক দখল করেছে প্রভাবশালী পাঁচ ব্যক্তি। তাদের প্রভাবের কারণে ভূমিহীন কৃষকরা তাদের ভোগদখলযোগ্য জমি হারিয়ে বিপাকে রয়েছেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উভয় পক্ষের কাগজপত্র দেখে প্রকৃত কৃষকদের জমি ভোগদখল নিতে আদেশ দিলেও প্রভাবশালীরা সেই আদেশ অমান্য করে রাতের আঁধারে জমিতে ধান বপন করেছেন। এসব অভিযোগ করেছেন ওই এলাকার প্রায় অর্ধশত ভূমিহীন কৃষক। মুজিবনগর ইউনিয়নটি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এলাকা। এখানে প্রায় ১৩ হাজার মানুষের বসতি রয়েছে।

জানাযায়, নদী ভাঙনের পর বসতভিটী ও ফসলি জমি হারানো ভূমিহীন পরিবারগুলো মুজিবনগর ইউনিয়নে আশ্রয় নিয়ে সরকারের কাছে জমি বন্দোবস্তের আবেদন করেন। সরকার এসব ভূমিহীন পরিবারকে চর মনোহর মৌজার ৪ ও ৫ নম্বর সীটে দেড় একর করে জমি বন্দোবস্ত দেয়। তখন তারা সেখানে বসতি স্থাপন করেন। এর মধ্যে দেড় একর জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার পরেও অনেকেই অন্য বন্দোবস্তমূলক মালিকের কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছেন। সব মিলিয়ে বন্দোবস্ত, ক্রয় ও ওয়ারিশ সূত্রে একশ একর জমির মালিক রয়েছেন প্রায় অর্ধশত ভূমিহীন কৃষক। দীর্ঘ বছর ধরে তারা ওইসব জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করে আসছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পলায়নের পর স্থানীয় প্রভাবশালী পাঁচ ব্যক্তি- মো. সিরাজ বেপারী, মো. হারিছ বেপারী, রুবেল বেপারী, আলিম হাওলাদার ও বাবুল কন্ট্রাক্টর — তাদের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রকৃত ভূমিহীন কৃষকের একশ একর জমি অবৈধভাবে দখল করে নেন। কৃষকরা বিভিন্ন দপ্তর ও ব্যক্তির কাছে গেলে কোনো প্রতিকার পাননি। ৫ আগস্টের পর থেকে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হুমকি-ধামকিতে অনেক কৃষক এলাকা ত্যাগ করেছেন।

কৃষক মো. ইউনুস হাওলাদার বলেন, ‘আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে নদী ভাঙনের পর আমরা মুজিবনগর ইউনিয়নে আশ্রয় নিয়েছি। সরকার আমার নামে দেড় একর জমি বন্দোবস্ত দিয়েছে। আমি অন্য একজন বন্দোবস্তমূলক মালিকের কাছ থেকে আরও দেড় একর জমি ক্রয় করি। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চর মনোহর মৌজার ৪ নম্বর সীটের ৪১৮ ও ৪১০ খতিয়ানের তিন একর জমিতে চাষাবাদ করি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর মো. সিরাজের নেতৃত্বে আমার জমি ভোগদখল করা হয়েছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি জমি চাষ করতে পারছি না। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। তিনি উভয় পক্ষকে ডেকে কাগজপত্র পর্যালোচনা করেছেন এবং আমাদেরকে জমি ভোগদখল করার অনুমতি দিয়েছেন।’

একই এলাকার কৃষক আ. খালেক ফরাজী বলেন, ‘আমি এই চরে প্রায় ৩০ বছর ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। কৃষিকাজই আমার মূল পেশা। নিজের ও অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে চাষাবাদ করি। দিয়ারা ২১ ও ২২ খতিয়ানে আমার ৩ একর জমি রয়েছে। প্রভাবশালী পাঁচ ব্যক্তি আমার জমি দখল করেছে। এমনকি আমার ভাড়া চাষের জমিও তারা নিয়ে গেছে। আমি এখন নিঃস্ব। চাষাবাদের আয় দিয়ে আমার পাঁচ সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ চলে। এক বছর ধরে আমি বেকার, আয়ের পথ বন্ধ। বিভিন্ন জনের কাছে ঘুরেও জমি ফিরে পাইনি।’

একইভাবে আনিছ পাটোয়ারী, খোকন হাওলাদার, রশিদ, আ. হাসেম, মন্নান, ইউনুস ও আ. মালেকসহ প্রায় অর্ধশত কৃষক তাদের ভোগদখলযোগ্য জমি হারিয়ে বিপাকে রয়েছেন।

অভিযুক্তদের মধ্যে রুবেল বেপারী মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা প্রকৃত মালিকদের কাছ থেকে জমি রাখিনি। আগে যারা এই জমি দখল করেছিল, তাদের কাছ থেকে আমরা জমি দখল করে অন্যান্য চাষীদের কাছে লগ্নি দিয়েছি।’ তবে প্রকৃত কৃষকরা জমি কিভাবে ফিরে পাবে—এই প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়েছেন। মো. সিরাজ বেপারী, মো. হারিছ বেপারী, আলিম হাওলাদার ও বাবুল কন্ট্রাক্টরকে সরেজমিনে পাওয়া যায়নি এবং ফোনে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এমাদুল হোসেন বলেন, ‘জমির প্রকৃত মালিকদের কাগজপত্র সঠিক। তাদেরকে জমি ভোগদখল করার জন্য বলা হয়েছে।’

Link copied!