ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

আখাউড়ায় লেপ-তোশক তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৫, ০১:০৫ পিএম
লেপ- তোশকেরে কারিগর। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

প্রকৃতিতে হেমন্তকাল চলমান। বইতে শুরু করেছে শীতের হাওয়া। ভোরবেলায় গাছের পাতায়, ঘাসের ডগায় এবং সোনালি ধানের শীষে মুক্তির মতো শিশিরের কণা পড়ছে। ধীরে ধীরে শীত অনুভূত হচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার আবহাওয়ায় তা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে।

দিনের বেলায় কিছুটা উষ্ণতা থাকলেও সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা ঘিরে ধরছে পরিবেশকে। মধ্যরাত থেকে শীত আরও তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে। পাতলা কাঁথা দিয়ে শীত সামলানো কঠিন হওয়ায়, পরিবারের সদস্যদের জন্য লোকজন ইতিমধ্যেই লেপ ও তোশক তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এর ফলে আখাউড়ার হাট-বাজারে লেপ-তোশকের কারিগররা তৎপর সময় পার করছেন।

তবে লেপ-তোশক বানানোর উপকরণের দাম বাড়ায় পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে কারিগরদের মজুরি। ফলে গত বছরের তুলনায় এবার বাড়তি দাম গুনতে হবে ক্রেতাদের।

পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, দোকানগুলোতে লেপ-তোশকের পসরা সাজানো রয়েছে। ধুনকররাও লেপ-তোশক তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

স্থানীয়দের কাছে জানা গেছে, কারিগররা সাদা, চায়না, গোলাপী, শিমুল, কার্পাস, হলুদ কম্বার এবং পলিউল তুলা দিয়ে লেপ তৈরী করছেন। এছাড়া কালো রাবিস, কালো হুল এবং উইল তুলা দিয়ে জাজিমও তৈরি হচ্ছে। এই উপজেলায় লেপ-তোশক তৈরির জন্য সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে সাদা, কার্পাস, চায়না, কালো রাবিস এবং কালো হুল তোলার।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য লেপ-তোশক প্রস্তুত ও মজুদ করে রেখেছেন। বাজারে এই পণ্যের দাম ধরণের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন। শিমুল তুলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০০-৬০০ টাকা, কার্পাস তুলা ১৮০-২২৫ টাকা, বোমা তুলা ১২০-১৩০ টাকা, চায়না তুলা ৯০-১১০ টাকা, কালো হুল ৯০-১১০ টাকা, কালো রাবিস ৭০-৮০ টাকা এবং সাদা তুলা ১১০-১৩০ টাকা দামে।

গত বছরের তুলনায় এবার তুলার দামের প্রতি কেজিতে ২০-৩০ টাকা বৃদ্ধি হয়েছে। পাশাপাশি, লেপ-তোশক তৈরিতে কারিগরদের মজুরিও বেড়েছে।

লেপ-তোশকের দোকান মালিক মো. কামাল মিয়া বলেন, এ বছর শীত আগমনের শুরুতেই ক্রেতাদের লেপ- তোশকের ভালো অর্ডার পাচ্ছি। তাছাড়া বিক্রি ও ভালো হচ্ছে। শীত পড়লে চাহিদা আরও বেড়ে যাবে।

লেপ-তোশক ব্যবসায়ী মো: আলম বলেন, তুলার মান পরিমানের ওপর নির্ভর করে তৈরীর খরচ। এ বছর নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লেপ-তোশকের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে, বেড়েছে মজুরিও।

শীত যত এগিয়ে আসছে ততই লেপ- তোশকের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভালো মানের একটি লেপ-তোশক তৈরী করতে নিচে ১৫শ টাকা  থেকে উপরে ৪ হাজার  টাকা নেওয়া হয়। গত এক সপ্তাহে ৮ টি লেপ- ও তোশক তৈরীর অর্ডার পেয়েছি। তাছাড়া প্রতিদিনই লেপ- তোশক বিক্রি হচ্ছে। 

কারিগর মো. আলম জানান, শীত এখনো পুরোপুরি এসেছে না। তবে গত কয়েকদিন ধরে কাজের চাপ বেড়ে গেছে। ইতিমধ্যে কেউ পুরনো লেপ ভেঙে নতুন করে বানাচ্ছেন। কেউ নতুন তুলা দিয়ে তৈরি লেপ, তোশক ও বালিশ ক্রয় করছেন, আবার কেউ অর্ডার দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এবারের কাজের চাপ অনেক বেশি।

পৌর শহরের দেবগ্রাম এলাকার মো: হুমায়ুন মিয়া বলেন, এখনো শীত আসেনি। তবে গত কয়েক দিন ধরে শেষ রাতে শীত অনুভূত হচ্ছে। তাই আগে ভাগেই একটি লেপ ও তোশক বানানোর অর্ডার দিয়েছি। তবে কাপড়, তোলা ও মজুরি অনেক বেড়েছে বলে মনে হয়।

মো. রিপন মিয়া বলেন, ছেলে হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করছেন। সামনে শীত আসছে তাই ছেলের জন্য একটা লেপ কিনতে এলাম। গত বছর যে লেপ ১৫০০ টাকায় নিয়েছি এবছর সমমানের লেপই ২হাজার টাকায় কিনতে হলো।