ঢাকা শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

চাঁপাইনবাবগঞ্জে চার বিজিবি সদস্যের বিরুদ্ধে টাকা-মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগ

আব্দুল ওয়াহাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ০৯:২১ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে চারজন বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সদস্যের বিরুদ্ধে ৮ লাখ টাকা ও দুটি মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের অভিযোগ তুলেছে জেলা গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ তোলেন।

আলমগীর কবির জানান, ‘কানসাট থেকে দুটি মোবাইল ফোন কিনে বাড়ি ফেরার পথে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে পৌঁছালে বিজিবির পোশাক পরিহিত চারজন সদস্য তাদের গতিরোধ করে। তারা বাঁশ ও লাঠি দিয়ে পথ আটকে জিজ্ঞাসা করেন, ব্যাগে কী আছে। তিনি জানান, ব্যাগে টাকা ও মোবাইল ফোন রয়েছে। এরপর তার ছোট ভাইয়ের পিঠে থাকা ব্যাগটি- যার মধ্যে ছিল ৮ লাখ টাকা ও দুটি মোবাইল ফোন- তারা ছিনিয়ে নেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরপর তারা আমাদের সঙ্গে আসতে বলে। কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ দুটি মোটরসাইকেলে করে পাশের সরু রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যায়। একজন বিজিবি সদস্যের নামফলকে লেখা ছিল ‘মোতালেব’। আমি তাদের পেছনে পেছনে কলেজ পর্যন্ত গিয়েও খুঁজে পাইনি।’

ঘটনার পরপরই আলমগীর মোবাইলে লাইভে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং ঘটনার বর্ণনা দেন। পরে তিনি শিবগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন এবং ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ককে বিষয়টি ফোনে জানান। অধিনায়ক জানান, সেখানে বিজিবির কোনো টহল টিম ছিল না এবং বিজিবি এ ধরনের কাজ করে না।

পরবর্তীতে এক সিসিটিভি ফুটেজে চারজন বিজিবি সদস্যকে ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায় বলে দাবি করেন আলমগীর। তিনি জানান, ‘এই ফুটেজ দেখালে সোনামসজিদ বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার সংশ্লিষ্টদের বিজিবি সদস্য হিসেবে শনাক্ত করেন।’

পরে ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরে আলমগীর ও গণ অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল আমিনকে ডেকে পাঠান অধিনায়ক। সেখানে তাদের ব্যাগ থেকে কয়েকটি মোবাইল ফোন দেখানো হয়, তবে দাবি অনুযায়ী ৮ লাখ টাকা ও দুটি মোবাইল ফোন ছিল না।

আলমগীর বলেন, ‘সিও মহোদয় আমাকে এসব ভুলে যেতে বলেন এবং আমার ছেলেকে ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে ভর্তি ও বিনা বেতনে ১০ বছর পড়াশোনার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন।’

বিজিবির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান

গণ অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল আমিন বলেন, ‘সিও আমাদের ২৪টি মোবাইল ফোন দেখিয়ে বলেন, এগুলো দিয়ে আপনারা ক্ষতির কিছুটা ক্ষতিপূরণ নিতে পারেন। কিন্তু আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি। আমি তাকে প্রশ্ন করি, এসব মোবাইল অবৈধ হলে আলমগীরকে আটক করা হলো না কেন?’

তিনি আরও বলেন, ‘সিও জানান, হয়তো আমাদের রাজনৈতিক প্রভাব থাকতে পারে, তাই সরাসরি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’

আলমগীর কবির বিজিবি সদস্যদের বিচার ও ছিনতাই হওয়া টাকা ও মোবাইল ফোন ফেরতের দাবি জানান।

থানায় অভিযোগ ও বিজিবির পাল্টা বক্তব্য

এ ঘটনায় শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম কিবরিয়া জানান, ‘আলমগীর কবির থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।’

তিনি আরও জানান, ‘ঘটনার পরদিন বিজিবিও একটি মামলা দায়ের করেছে।’

এদিকে, ৫৯ মহানন্দা বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া হোয়াটসঅ্যাপে দেওয়া বার্তায় বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সোনামসজিদ-শিবগঞ্জ সড়কে দুইজন মোটরসাইকেল আরোহীকে থামতে বলা হলে তারা পালিয়ে যায়। তাদের পিঠে থাকা ব্যাগটি ফেলে পালায়। ব্যাগ তল্লাশি করে ২৪টি ভারতীয় চোরাই মোবাইল উদ্ধার করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আলমগীর একজন ভারতীয় চোরাই মোবাইল ব্যবসায়ী। তার ৮ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটি সু-শৃঙ্খল একটি বাহিনীর মানহানির স্পষ্ট অপচেষ্টা।’