চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সিংহরিয়া (মইগ্গের কুম্বারপাড়) এলাকায় হালদা নদীর বাঁধে ফের বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে আশপাশের অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবার নতুন করে বন্যা ও পানিবন্দি হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।
বন্যায় ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। পানির তোড়ে ঘরবাড়ি, কৃষিজমি এবং গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এখনো অনেক পরিবার সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
স্থানীয়রা জানান, গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় ঠিক এই দুটি পয়েন্ট দিয়ে বাঁধ ভেঙে ইউনিয়নের বিশাল অংশ প্লাবিত হয়। ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও গবাদিপশু হারিয়ে বহু পরিবার এখনো সেই ক্ষতির ঘানি টানছে।
সম্প্রতি টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ওই দুটি পয়েন্টে আবারও নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাঁধের কোথাও কোথাও মাটি ধসে পড়েছে, দুর্বল হয়ে পড়েছে পুরো রক্ষাকবচ। ফলে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, গত বছরের বন্যার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কিছু জিও ব্যাগ সরবরাহ করে সাময়িক মেরামতের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু প্রবল পানির স্রোতে সেগুলো নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তখন থেকেই এলাকাবাসী স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা পাখি বালা বড়ুয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি এই বাঁধ স্থায়ীভাবে ঠিক করতে হবে। দুই বছর ধরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া জিও ব্যাগ দিয়ে কোনোরকম সংস্কার করলেও তা পানির স্রোতে তলিয়ে যায়। এবার যদি পুরো বাঁধ ভেঙে যায় সন্তানদের জীবনও রক্ষা করতে পারব না।’
একই শঙ্কার সুর কৃষক দিদারুল আলমের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘প্রায় তিন একর জমিতে ধান রোপণ করতে চাচ্ছি। পানি ঢুকে গেলে তো সব শেষ হয়ে যাবে। কৃষকের তো এমনিতেই কষ্ট তার ওপর যদি এই ক্ষতি হয় পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. লোকমান জানান, ‘গতবার বন্যার বাঁধটি ভেঙে গেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জিও ব্যাগ দিয়ে সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো পানির স্রোতের টেকেনি। কংক্রিটের ব্লগ দিয়ে স্থায়ী সংস্কার করতে হবে। তা না হলে এলাকাবাসী বিপৎমুক্ত হবে না।’
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ফটিকছড়ির প্রকৌশলী সোহাগ তালুকদার জানান, ‘গত বছরের বন্যার পর সাময়িকভাবে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। এবার তা পানির তোড়ে তলিয়ে গেছে। ঠিকাদারকে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধটি পুনঃসংস্কারের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। স্থায়ীভাবে সংস্কারের জন্য নতুন করে বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ প্রয়োজন, বরাদ্দ পেলে কংক্রিটের ব্লগ দিয়ে কাজটি টেকসইভাবে করা হবে।’