চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় টার্গেট কিলিং মিশনে সক্রিয় রয়েছে ছয়টি গ্রুপ—এমন তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম সান্তু। সম্প্রতি চট্টগ্রামে সংঘটিত বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে এসব গ্রুপের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলোর বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
এসপি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এই চট্টগ্রামে পুলিশ থাকবে না সন্ত্রাসীরা থাকবে—দুজন একসঙ্গে থাকতে পারে না। সন্ত্রাসীদের উদ্দেশে বলছি, আপনারা আত্মসমর্পণ করে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আসুন। তা না হলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’
তিনি আরও জানান, গত ৭ অক্টোবর চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় সংঘটিত ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম হত্যা মামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অভিযানে বিপুল পরিমাণ বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয় এবং দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন সাকিব ও শাহেদ। উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে: ৪টি বিদেশি পিস্তল, ১টি রিভলভার, ১টি চায়না রাইফেল, ১টি শটগান, ৪৯ রাউন্ড রাইফেলের গুলি (৭.৬২), ১৭ রাউন্ড শটগানের কার্তুজ, ১৯ রাউন্ড পিস্তলের গুলি (৭.৬৫), ৭টি ম্যাগাজিন, ২টি দেশীয় রামদা ও ১টি রকেট ফ্লেয়ার। এ ছাড়া ৫০ পিস ইয়াবা, ২৫০ গ্রাম গাঁজা ও ৯৬ হাজার টাকা নগদও উদ্ধার করা হয়।
এসপি সাইফুল ইসলাম জানান, উদ্ধার করা অস্ত্রগুলোর কিছু আব্দুল হাকিম হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছিল।
জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ৩১ অক্টোবর রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের গরীব উল্লাহ পাড়া এলাকা থেকে মো. আব্দুল্লাহ খোকন (ল্যাংড়া খোকন)-কে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন এবং পরবর্তীতে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
খোকনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২ নভেম্বর রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরীহাট এলাকা থেকে আরও এক আসামি মো. মারুফকে গ্রেপ্তার করা হয়। মারুফের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে পুলিশ জানতে পারে রাউজানে একটি লুকানো অস্ত্রভান্ডার এবং অপর এক সহযোগী মো. সাকলাইন হোসেন-এর নাম।
এরপর ৪ নভেম্বর রাতে হাটহাজারী থানার একটি বিশেষ টিম রাউজানের নোয়াপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাকলাইন হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। তার হেফাজত থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একনলা বন্দুক, একটি এলজি ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
পরবর্তীতে মারুফ, জিয়া ও সাকলাইনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল (রোববার) তারিখে রাউজান থানাধীন নোয়াপাড়া চৌধুরীহাটের আইয়ুব আলী সওদাগরের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় সাকিব ও শাহেদ নামে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর বিকেলে ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম নিজ গাড়িতে করে শহরে ফেরার সময় মদুনাঘাট ব্রিজের পশ্চিম পাশে পৌঁছালে মোটরসাইকেলে আসা সন্ত্রাসীরা তার গাড়ির সামনে এসে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। ঘটনার পর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও হাটহাজারী থানা যৌথভাবে তদন্ত শুরু করে।




সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন