চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে পাপিয়া খাতুন (৪২) নোমের এক নারীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর পালিয়ে আলমডাঙ্গায় খালার বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। পরে সেখান থেকে শনিবার (২৫ জুলাই) রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া স্বামীকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনার বিবরণ:
নিহত মনিরুল ইসলাম (৫০) বালিহুদা গ্রামের মৃত দিদার উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে। তিনি পেশায় একজন দিনমজুর ছিলেন।
জানা যায়, শনিবার দুপুর ১টার দিকে মাধবপুরের নিজ বাড়িতে গলা কাটা অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রতিবেশীরা প্রথমে ঘরে পড়ে থাকা মনিরুলের মরদেহ দেখতে পান এবং তাৎক্ষণিকভাবে জীবননগর থানা পুলিশে খবর দেন।
পুলিশ জানায়, ঘটনার পর মনিরুলের স্ত্রী পাপিয়া ও ছেলে রাজু (২৬) দুজনেই পালিয়ে যান। পরে রাত ৪টার দিকে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বাসবাড়িয়া গ্রামে খালার বাড়ি থেকে পাপিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে ছেলেকে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
পুলিশের বক্তব্য:
জীবননগর থানার ওসি মো. মামুন হোসেন বিশ্বাস বলেন, ‘পাপিয়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। পারিবারিক কলহ, স্বামীর পরকীয়া ও সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ– এসব বিষয় থেকেই হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত।’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের পর থেকেই মনিরুল তার স্ত্রী পাপিয়াকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। তিনি পরকীয়াতেও জড়িত ছিলেন, এমন অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে পাশের গ্রামে একটি জমি কিনে তা নিজ নামে রেজিস্ট্রি করেন, যা নিয়েও দাম্পত্য কলহ বাড়তে থাকে।
এ ছাড়া ছেলে রাজুর বিদেশ যাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা নিয়ে পরিবারে তীব্র বিরোধ চলছিল। ঘটনার দিন সকাল থেকেই মনিরুল, পাপিয়া ও ছেলে রাজুর মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলছিল।
পুলিশ জানায়, ‘‘পারিবারিক ঝগড়ার একপর্যায়ে মনিরুল তার স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। তখন পাপিয়া বলেন, ‘হয় এই বাড়িতে তুই থাকবি, না হয় আমি থাকব।’ এরপরই হাঁসুয়া দিয়ে স্বামীর গলায় কোপ দেন পাপিয়া।’’
তদন্ত ও মামলা:
রাতেই মনিরুলের ভাই জহির উদ্দিন জীবননগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি হাঁসুয়া ও একটি কুড়াল উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় মনিরুলের ছেলে রাজুও সন্দেহভাজন হিসেবে তদন্তের আওতায় রয়েছেন।
প্রতিবেশী আকিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার পর রাজু আমাকে ফোন করে জানতে চায়, ওর বাবা মারা গেছেন কি না। তখনই বিষয়টি আমাদের সন্দেহ হয়।’
পুলিশ জানিয়েছে, ‘পাপিয়া ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন, তবে আলমডাঙ্গার বাসবাড়িয়া এলাকায় আত্মগোপনে থাকাকালীন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
আপনার মতামত লিখুন :