দেশের থানাগুলোতে ফিরতে শুরু করেছেন পুলিশ সদস্যরা। সদস্য মডেল থানায় গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৮৫ জন পুলিশ সদস্য তাঁদের নিজ নিজ কর্মে যোগ দিয়েছেন।
তাদেরমধ্যে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), তদন্ত ওসি ছাড়া-ও উপপরিদর্শক ১৭ জন, সহকারী উপপরিদর্শক ১৩ জন, কনস্টেবল ৩৭ জন ও নারী কনস্টেবল ৭ জন। ১০২ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে চলছে সদর থানার কার্যক্রম। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অভিযোগ ৭টি ও সাধারণ ডায়েরি হয়েছে ৮ টি।
ডিউটি অফিসার এস আই নূর মোহাম্মদ জানান, গতকাল রাত পর্যন্ত ৭টি অভিযোগ ও ৮টি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। এরমধ্যে জায়গা দখল, মোবাইল হারানো, হামলা ইত্যাদি।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: রকিবুজ্জান বলেন, পুরোদমে থানার কাজকর্ম শুরু হয়েছে। এখন থেকে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে পুলিশ। গতকাল কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য এসআইদের দায়িত্ব দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে অনেকে লুট করা বিভিন্ন দ্রব্যাদি ফেরত দিয়ে যাচ্ছেন। ভাংচুর, লুটপাটের ঘটনায় মামলা হবে কি-না জানতে চাইলে ওসি বলেন, আমরা এখনো হিসেব করে দেখিনি কি পরিমাণ মালামাল লুট বা ক্ষতি হয়েছে। এগুলো আগে দেখতে হবে। সবে মাত্র থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও প্রাণহানি হয়। শেষ তিন দিন (শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে-পরে) থানা, ফাঁড়িসহ পুলিশের বেশ কিছু স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সহিংসতায় প্রথম মৃত্যু হয় ১৬ জুলাই। এরপর বাড়তে থাকে সহিংসতা। বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত এ আন্দোলনে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪৫০ জনের। অন্যদিকে সহিংসতার ঘটনায় পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার ৪২ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দু’জন র্যাব সদস্য রয়েছে। এছাড়া বিপূল সংখ্যক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালেই ৫০৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সারা দেশে পুলিশি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা থানায় আসতে সাহস পাননি। স্থাপনা পাহারা দেওয়ার জন্য আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়।
পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের পতনের পর জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফের থানায় যোগ দিলেও এখনো পুরোপুরিভাবে মাঠের কাজ শুরু করতে পারেনি পুলিশ সদস্যরা। বাহিনীটির যেসব সদস্য থানায় যোগ দিয়েছেন, তারাও নৈমিত্তিক কাজগুলোই শুরু করছেন। থানায় কেবল সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং কিছু অভিযোগ নেওয়া ও অভ্যন্তরীণ কাজ চলছে। থানায় পুলিশ সদস্যরা হাজিরা দিয়ে চলে যাওয়ায় বেশিরভাগ সময় সুনসান নীরবতা থাকছে।
কয়েকজন পুলিশ সদস্য জানান, সহিংসতার কবলে পড়ে অনেক সাধারণ মানুষের মৃত্যু হওয়ায় জনগণের মধ্যে এখনো ক্ষোভ রয়েছে। এ কারণে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা কাজে যেতে ভয় পাচ্ছে। আবার অনেকের পরিবারও চায় না, পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত হওয়া ছাড়া কেউ কাজে যোগ দিক। তবে দ্রুত ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন কর্মীদের রদবদল করা হলে সবাই ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় যাবে। নতুন জায়গায় গেলে কেউ কাউকে চিনবে না বিধায় ক্ষোভটাও কম থাকবে।
বুধবার সন্ধ্যায় সদর মডেল থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানা প্রাঙ্গণের নিরাপত্তায় রয়েছেন সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যরা।
থানাটিতে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নেওয়াসহ দৈনন্দিন কাজ করা হচ্ছে। বাইরে গোল ঘরে সাধারণ মানুষের অভিযোগ নিচ্ছেন দায়িত্বে থাকা সেনা সদস্যরা।
বাইরে কথা হয় সালাউদ্দিন নামের একজনের সাথে। তিনি বলেন, ঝিলংজা এলাকায় আমার রেজিস্ট্রার জায়গা রাতেই দখল করে নিয়েছেন সন্ত্রাসীরা। এজন্য থানায় এসেছি অভিযোগ করতে।
পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, ছাত্রদের কারণে দেশে অনেক বিপ্লব হয়েছে। তবে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় বিপ্লব রচিত হয়েছে এবার। এর কারনে কিছুদিন আমরা কঠিন সময় অতিবাহিত করেছি। পুলিশের থানার কার্যক্রম না থাকায় বিভিন্ন স্থানে চুরি ডাকাতি ছিনতাই হচ্ছে। মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছিল। প্রকৃত অপরাধীরা কিন্তু এসব সুযোগ নিচ্ছে। এজন্য পুলিশ সদস্যরা থানায় যোগদান করলেও ভীতি এখনো কাটেনি।