ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

সরকারি অফিস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ছাত্রলীগের আছেম

তাজুল ইসলাম পলাশ, কক্সবাজার
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৪, ০৮:১৭ পিএম
বামে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, মাঝখানে আছেম, ডানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি এস এস সাদ্দাম। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি হোসাইন সাদ্দাম এবং কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেন এর প্রভাব দেখিয়ে টেন্ডার ভাগিয়ে নেয়ার পর ব্যাপক অনিয়ম আর দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কাজ করতেন "এডি করপোরেশন" নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্টান। তার ভয়ে অনেকটা তটস্থ থাকতেন উপজেলা প্রকৌশলী। সম্মান হারানোর ভয়ে কেউ কথা বলতেন না। ছাত্রলীগের প্রভাব বিস্তারের কারণে মাঠ পর্যায়ে কাজেরও তদারকি করতেন না কর্মকর্তারা। ফলে কাজে পুকুর চুরি হলেও ব্যবস্থা নিতেন না সংশ্লিষ্টরা। এ প্রতিষ্ঠানটি কাজের অনিয়মের ব্যবস্থা না নেয়ায় চাকরি হারিয়েছেন ঈদগাঁও উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নিজে এক সমন্বয়কের আত্মীয় পরিচয়ে সরকারি অফিসে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আছেম।

উপজেলা প্রকৌশলী বরখাস্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

তথ্যমতে, এডি করপোরেশন নামে প্রতিষ্ঠানটি স্বত্বাধিকারী মো. আছেম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি হোসাইন সাদ্দাম, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাদ্দাম ও সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনানকে ব্যবসায়ীক পার্টনার দেখিয়ে সরকারি অফিসে প্রভাব বিস্তার করতেন। ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজে ব্যাপক অনিয়ম করতেন। অনেক সময় বিল আটকে দিলেও ক্ষমতার প্রভাবে তা ছাড়িয়ে নিতেন। সরকার পতনের আগে ছাত্রলীগের ক্ষমতা ব্যবহার করতেন আছেম।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, রাজপথে আছেমের কোন অবদান না থাকলেও টাকায় পদবী কিনতে কক্সবাজার সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের ফলে সেটি আর হয়নি। এখন নিজেকে সরকার বিরোধী আন্দোলনের সমর্থক বলে প্রচার করছেন। নিজের ব্যবহৃত ফেইসবুক ডিএক্টিভ করে রেখেছেন আছেম।

এদিকে এডি কর্পোরেশন নামে প্রতিষ্ঠানটি "ওয়াশব্লক" নির্মাণ প্রকল্পে "ঈদগাঁও ভাদিতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেহেরঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৩৫ নং কূলির ছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্মিত ‘‘ওয়াশব্লক" কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লিখত অভিযোগ করেন বীরমুক্তিযোদ্ধা ও ঈদগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা মাস্টার  নুরুল আজিম। তার অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে কাজ পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। পরে নতুন করে কাজ করতে বাধ্য হন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এডি কর্পোরেশন। একই সাথে কাজে তদারকি না করায় তৎকালীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঈদগাঁও উপজেলা উপ সহকারি প্রকৌশলি মাহমুদুল হাসানকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এবং দুই জন মাঠ কর্মকর্তাকে শাস্তি মূলক বদলি করে। 

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া উপসহকারী প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান বলেন, আমি কাজে নিয়মিত তদারকি করেছি এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিরুদ্ধে রিপোর্টও জমা দিয়েছি। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে এডি করপোরেশন‍‍` এর স্বত্বাধিকারী মো. আছেম বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানটি কোন রকম অনিয়মে জড়িত নয়। আমরা সুন্দরভাবে কাজ শেষ করেছি। কি জন্য অনিয়মের কথা তুলে ধরা হয়েছে আমি জানি না। আর আমি কখনও ছাত্রলীগের ক্ষমতা দেখায় নি।

জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজার এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনিময়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় ঈদগাঁও উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। নিম্নমানের কাজ করায় ওয়াশব্লকগুলো নতুন করে করানো হয়েছে।