ঢাকা শনিবার, ৩১ মে, ২০২৫

নিষেধাজ্ঞায় দুশ্চিন্তায় সেন্টমার্টিনবাসী

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার
প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৫, ০৫:১৫ এএম
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। ফাইল ছবি

পরিবেশ পুনরুদ্ধার ও ভারসাম্য রক্ষায় পর্যটক যাতায়াতসহ নানা বিধিনিষেধাজ্ঞার কারণে জীবন-জীবিকা নিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসী। বন্ধ রয়েছে আবাসিক হোটেল-কটেজ, রেস্তোরাঁসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট নানা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। 

এ ছাড়া সাগরে মাছ ধরার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় দ্বীপের অধিকাংশ মানুষ এখন কর্মহীন। এতে সেন্টমার্টিন যেন এখন বেকারের দ্বীপে পরিণত হয়েছে। দ্বীপের বাসিন্দারা বলছেন, পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি দ্বীপবাসীর স্বাভাবিক যাতায়াতসহ নানা বিধিনিষেধের কারণে জীবিকায়ন সংকুচিত হয়ে পড়েছে। 

এতে খাদ্যপণ্যের অতিরিক্ত দাম ও উপার্জন কমে যাওয়ায় নানা সংকটে দ্বীপবাসী। তাদের দাবি, সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে সারা বছর পর্যটক যাতায়াত উন্মুক্ত রেখে দ্বীপবাসীর জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক রাখা। 

এ নিয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। পাশাপাশি দ্বীপবাসীর দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বিকল্প কর্মসংস্থান, জীবন দক্ষতা অর্জন এবং সহায়তায় সরকারের নানা সংস্থা বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে।

বঙ্গোপসাগরের বুক চিড়ে জেগে ওঠা দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, যার প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগে প্রতি বছর ছুটে যান লাখো পর্যটক। দুই বছর আগেও পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের আনাগোনায় মুখর থাকত দ্বীপটি; পাশাপাশি অমৌসুমেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটত। 

এতে বিগত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দ্বীপের মানুষের জীবন-জীবিকা অনেকটা পর্যটননির্ভর হয়ে ওঠে। কিন্তু প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আনাগোনার পাশাপাশি প্লাস্টিকসহ নানা বর্জ্যে দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। 

এ নিয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো গত ২০২৪ সাল থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত সীমিত করার পাশাপাশি স্থানীয়দের জন্য নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরিবেশ অধিদপ্তরের জারি করা নির্দেশনা মতে, পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন দ্বীপে ২ হাজারের বেশি পর্যটক যাতায়াত করতে পারবেন না। 

এ ছাড়া নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে রাতযাপনেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। শুধু জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে রাতযাপনে নির্দেশনা থাকলেও বছরের অন্য সময়ে পর্যটকের পাশাপাশি বহিরাগতদেরও যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এতে পর্যটননির্ভর দ্বীপবাসীর জীবন-জীবিকা পড়েছে গভীর সংকটে।

জানা যায়, সাড়ে ১০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস সেন্টমার্টিন দ্বীপটিতে। দুই দশক আগেও দ্বীপের মানুষের মূল জীবিকা ছিল সাগরে মাছ ধরার পাশাপাশি কৃষিকাজ। কিন্তু পর্যটক আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় তা এখন পর্যটননির্ভর হয়ে পড়েছে। 

মূলত আদি পেশার পাশাপাশি পর্যটন মৌসুমের চার-পাঁচ মাসের উপার্জন দিয়েই নির্বাহ হতো দ্বীপবাসীর জীবন-জীবিকা। কিন্তু গত দুই বছর ধরে পর্যটক যাতায়াত সীমিতকরণ এবং নানা বিধিনিষেধের কারণে তাও বন্ধ হয়ে যায়। এখন বন্ধ রয়েছে হোটেল, কটেজ, রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁসহ পর্যটননির্ভর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এতে জীবন-জীবিকা নিয়ে চরম দুর্ভোগে প্রবালদ্বীপের বাসিন্দারা।

দ্বীপের বাসিন্দা কেফায়েত উল্লাহসহ অনেকে বলেন, পর্যটকদের জন্য নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি দ্বীপবাসীর স্বাভাবিক চলাচলে সরকারের নানা বিধিনিষেধ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পর্যটননির্ভর হওয়ায় দ্বীপের মানুষ এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকে রয়েছে দুর্ভোগে। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে স্থানীয়রা দ্বীপ ছাড়তে বাধ্য হবে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেন,  জলে ও স্থলে আয়ের উৎস বন্ধ থাকায় দ্বীপের শুধু সাধারণ মানুষ নয়, ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত। বিধিনিষেধ আরোপের আগে পর্যটন অমৌসুমেও দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত ছিল। 

এখন হোটেল, কটেজ, রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ। এ ছাড়া সাগরে মাছ ধরার ৫৮ দিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় অধিকাংশ দ্বীপবাসী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাই দুর্ভোগ লাঘবে দ্বীপে সারা বছর পর্যটক যাতায়াতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের দাবি তাদের।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের নানা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বলেছেন, দ্বীপবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে পরিবেশ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়সহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা বহুমুখী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এতে দ্বীপবাসীকে সহায়তার পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনে সরকার নানা কর্মতৎপরতা চালাচ্ছে। 

এদিকে সচেতন মহল বলছেন, দ্রুততার সঙ্গে দ্বীপবাসীর জীবন-জীবিকায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনে ব্যর্থ হলে মানুষ একটা পরিস্থিতিতে দ্বীপ ছেড়ে অন্যত্রে সরে যেতে বাধ্য হবে।