ঢাকা শনিবার, ০৯ আগস্ট, ২০২৫

অরুণের হাতের নখ ১৫ ইঞ্চি লম্বা, ৩৩ বছর ধরে কাটেননি

অমর গুপ্ত, ফুলবাড়ী
প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২৫, ০৯:৪৬ এএম
দিনাজপুরের অরুণ কুমার সরকার (৪০) টানা ৩৩ বছর ধরে বাম হাতের নখ কাটেননি। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রামের ফটো স্টুডিও ব্যবসায়ী অরুণ কুমার সরকার (৪০) টানা ৩৩ বছর ধরে বাম হাতের নখ কাটেননি।

বর্তমানে তার অনামিকার নখ ১৫ ইঞ্চি, কনিষ্ঠার ১৩ ইঞ্চি, মধ্যমার ১১ ইঞ্চি, তর্জনির ২ ইঞ্চি এবং বৃদ্ধাঙ্গুলের দেড় ইঞ্চি লম্বা।

১৯৮৪ সালে জন্ম নেওয়া অরুণ কুমারের বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ সরকার। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালীন এক সপ্তাহ নখ না কাটায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে নখ কাটতে বলেন। কিন্তু কৌতূহলবশত বাম হাতের নখ লুকিয়ে রেখে বড় করতে থাকেন তিনি।

ধীরে ধীরে নখের প্রতি গভীর ভালোবাসা জন্ম নেয় তার, আর তখন থেকেই বাম হাতের নখ কাটা বন্ধ করে দেন। প্রথমে বাবা-মায়ের আপত্তি থাকলেও পরে তারা ছেলের শখ মেনে নেন।

দীর্ঘদিন নখ না কাটায় সেগুলো গাছের ডালের মতো আকা-বাকা হয়ে গেছে। এ কারণে শুধু এলাকায় নয়, পুরো উপজেলাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিনই নখ দেখতে নানা বয়সী মানুষের ভিড় হয় তার বাড়িতে।

ব্যবসায়ী অরুণ কুমার সরকারের বাম হাতের নখ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

অরুণ কুমারের কাকাতো ভাই গৌতম কুমার রায় ও গ্রাম পুলিশ জ্যোতিষ চন্দ্র রায় বলেন, ‘আগে নখগুলো ভালো লাগত না, কিন্তু এখন দেখতে বেশ লাগে।’ 

ইউপি সদস্য নূর ইসলাম বলেন, ‘অরুণের নখ দেখলে অবাক লাগে। এটি ধৈর্যের বিষয়, আর দেখতে সুন্দরও লাগে।’

উত্তর লক্ষ্মীপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই অরুণ নখ কাটতেন না। শিক্ষকরা বকাবকি করলেও তিনি হাত লুকিয়ে ক্লাস করতেন। এখন তার নখ তাকে আলাদা পরিচিতি দিয়েছে।’

এলাকার হোমিও চিকিৎসক লিয়াতক আলী সতর্ক করে বলেন, ‘বড় নখে জীবাণু থাকতে পারে, যা শরীরে রোগের কারণ হতে পারে। তাই পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর রাখা জরুরি।’

অরুণ কুমার বলেন, ‘শখের বসেই নখ রাখা শুরু করেছিলাম। প্রথমে ব্যবসায় অসুবিধা হলেও এখন আর সমস্যা হয় না। নখ আমার গৌরবের বিষয়, তাই আর কোনোদিন কাটব না।’ 

তিনি জানান, নখের জন্য তিনি এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন এবং বহু মানুষ তাকে দেখতে আসে। নখ টিকিয়ে রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখেন।

২০০৩ সালে বিয়ে করা অরুণ বর্তমানে এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। ছেলের নামেই উত্তর লক্ষ্মীপুর বাজারে তার ‘কান্না ডিজিটাল ফটো স্টুডিও’ ব্যবসা। ছবি তোলা, বিকাশ লেনদেন, ফ্লেক্সিলোড ও ডিস সরবরাহ করেই চলে তার জীবিকা।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান বলেন, ‘বড় নখে ময়লা ও জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে, যা স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি তৈরি করে। দীর্ঘদিন নখ না কাটা আঙুলেরও ক্ষতি করতে পারে।’