বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আফরোজা লূনা, গাইবান্ধা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৭:০০ পিএম

পর্যটনের অপার সম্ভাবনা গাইবান্ধার তিন নদীর বাঁধ

আফরোজা লূনা, গাইবান্ধা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৭:০০ পিএম

গাইবান্ধার তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর বাঁধ এলাকার অপরূপ দৃশ্য। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ 

গাইবান্ধার তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর বাঁধ এলাকার অপরূপ দৃশ্য। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ 

বিস্তীর্ণ নদী ও বালুচর। নদীর পাশে চকচকে বাঁধ। বাঁধ ঘেঁষে সারি সারি সিমেন্টের বোল্ডার। বিস্তীর্ণ জনপদ ও সবুজ আবাদি জমি। এ যেন প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি।

গাইবান্ধায় তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর ৬৪ কিলোমিটার তীর এখন এমনই। আর তাই তো ছুটির দিন ছাড়াও এখানে সকাল-বিকাল লোকজনের ভিড় লেগেই থাকে। এই সৌন্দর্য দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন নারী-পুরুষসহ নানা বয়সি মানুষ। এখন সরকারিভাবে একটু উদ্যোগ নিলেই পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থান হিসাবে তুলে ধরা সম্ভব বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

গাইবান্ধা শহর থেকে সোজা ৬ কিলোমিটার দূরে বালাসীঘাট। এই ঘাটকে কেন্দ্র করেই সেখানে ব্রহ্মপুত্র নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় নদী তীরের দীর্ঘ ৬৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বাঁধের দু’পাশে লাগানো সবুজ ঘাস। এ ছাড়াও বালাসীঘাটে গড়ে তোলা হয়েছে বিআইডাব্লিউটিএ সুদৃশ্য গেস্ট হাউস, ট্রাক টার্মিনালসহ নানা ভবন।

গাইবান্ধার তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর বাঁধের পাশে দর্শনার্থীদের জন্য রাখা নৌকা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ 

উৎসব এলে তো কথাই নেই! নদী ভরা হোক আর শুকনো হোক, দুই সময়েই নদী আলাদা রূপ ধারণ করে। অনেকেই একটু জিরিয়ে নিতে নববর্ষ, পূজা, ছুটির দিন ও ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে আসেন বালাসীঘাটে। কেউ নৌকায় এপার-ওপার হয় কেউ নৌকায় চরে ঘরে বেড়ায়।

নদীর হিমেল হাওয়ায় আনন্দ উপভোগ করতে নারী-পুরুষের জমজমাট মিলন মেলায় পরিণত হয় এই নদীতীর। এই নতুন বাঁধকে ঘিরে সেখানে নদী ভ্রমণ, বালুচর ভ্রমণ, চরাঞ্চল ভ্রমণ ও নদী-পারে বসে আড্ডায় মেতে উঠেন দর্শনার্থী। আবার ভরা বর্ষায় পূর্ণ যৌবনা নদী বয়ে চলে কূল ছাপিয়ে।

তখন উত্তরজনপদের লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা থেকে শ শ নৌকায় ধান-পাটসহ নানা সামগ্রী নদীপথে চলে যায় বগুড়া, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন স্থানে।

গাইবান্ধার চরাঞ্চলে সারি সারি বেঁধে রাখা জেলেদের নৌকা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

দুই মৌসুমে নদী দুই রকম রূপ ধারণ করে। বর্ষায় এক রকম, শীত বা শুকনো মৌসুমে আরেক রকম। ছুটির দিনে শ শ নারী-পুরুষ আসেন বালাসীঘাটের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তারপর ঘাট থেকে ছোট-বড় নৌকায় নদীতে বেড়ানো। চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাপন দেখতে আসেনি কেউ কেউ।

 

বালাসীঘাট থেকে না হলে ফুলছড়ি ঘাট, সৈয়দপুরঘাট, কামারজানিঘাট, শ্রীপুর ঘাট, পোড়ার চর, হরিপুর ঘাটসহ অনেকগুলো ঘাট রয়েছে এই তিন নদীতে। চাইলেই দিনের বেলা বিভিন্ন মৌসুমে চরাঞ্চল ঘুরে বেড়াতে যায়। সুযোগ বুঝে চরাঞ্চলের এনজিও কর্মীদের আবাসস্থলগুলোতে রাত কাটানো সম্ভব।

গাইবান্ধার তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর বাঁধের ওপর, বালাসীঘাট। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

খুব অল্প খরচে এখানে খাবারও পাওয়া যায়। মাত্র ২০ টাকায় গাইবান্ধা শহর থেকে অটো রিকশায় চরে চলে আসা যায় বালাসী ঘাটে। অল্প খরচে নদীর টাটকা মাছের ঝোল তরকারি খাওয়ার মজাই আলাদা। মন ভরে যাবে চরের মানুষের আতিথেয়তা দেখে। এখানে দেখা যাবে, চরাঞ্চলের মানুষের হাটবাজার, জীবন-জীবিকা—বিশেষ করে চিরায়ত বাংলার ঢেঁকি।

 

চারদিকে সবুজের সমারোহ। ধান, পাট, ভুট্টা, সরিষা, বাদাম, চিনা, কাউন, তিল, তিশি, টমোটো, বেগুন, ঢ্যাঁড়স,  পটল, মরিচ মিষ্টি কুমড়া, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ নানা জাতের ফসলের সমারোহ। একসময়ের বালুচরে এখন সোনা ফলে।

চরাঞ্চলের মানুষ অনেক সুখে দিন কাটায়। অন্যদিকে বর্ষায় ডুবে যায় চরাঞ্চলের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ সমস্ত এলাকা। তখন শুধু থইথই পানি আর পানি।

গাইবান্ধার তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর বাঁধের পাশে দর্শনার্থীদের জন্য রাখা নৌকা। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বর্ষায় ভরা মৌসুমে তিস্তা যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর কিনারা দেখা যায় না। বালাসী থেকে নৌকা চলে কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, কুড়িগ্রাম, রংপুরের গঙ্গাচড়া, লালমনিরহাট, জামালপুরের সানন্দবাড়ি, ইসলামপুর, বাহাদুরাবাদঘাটসহ নানা স্থানে। বিভিন্ন পণ্য বহন করে নিয়ে যায় ঢাকা, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন স্থানে।

স্থানীয়রা বলছেন, একটু সৌন্দর্য বৃদ্ধি করলেই শুধু মৌসুমি নয়, এটি স্থায়ীভাবে হতে পারে পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থান। কর্মসংস্থানের সুযোগ হতে পারে নদীর দুই তীরের অনেক মানুষের।

অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম। গাইবান্ধার একজন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, সাংস্কৃতিক সংগঠকও।

‘কী নাই এখানে। ঘোড়ারগাড়ি, ছোট-বড় নৌকা, নৌযান, নৌ-পুলিশ। বিকেলে বালাসীঘাট থেকে দেখা যায় ভারতের গারো পাহাড়। আমরা চাই, গাইবান্ধার চরাঞ্চল ও বালাসীঘাট ও নতুন নির্মিত বাঁধকে ঘিরে দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হোক। বলেন অধ্যাপক কাইয়ুম।

গাইবান্ধার তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর বাঁধ এলাকার অপরূপ দৃশ্য। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বিচিত্র এই নদী-পারে তিন নদীকে কেন্দ্র করে বাঁধের পাশে নির্মিত হতে পারে বসার স্থান, দোলনা। হতে পারে স্পিড বোডে ভ্রমনের সুযোগ। গড়ে উঠতে পারে রিসোর্ট, আনন্দ তরী, হোটেল, মোটেল, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আছেন নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি।’

 

‘এসব বাস্তবায়ন হলে গাইবান্ধার তিন নদীর এই প্রশস্ত বাঁধ হতে পারে পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থান। এখান থেকে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে দুই পারের নদীভাঙনে নিঃস্ব পরিবারগুলোর। পাশাপাশি সরকারি রাজস্ব আয় বৃদ্ধি সম্ভব হবে।’

গাইবান্ধা বালাসীঘাটের পাশে নির্মিত ট্রাক টার্মিনাল। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহম্মদ বলেন, ‘বালাসীঘাট একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান। বালাসীঘাটের শ্রীবৃদ্ধি করার জন্য সরকারিভাবে ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বেশ ভালো ভুমিকা রেখেছে।’

তিনি স্থানটি আরও আকর্ষণীয় ও পর্যটনবান্ধব করতে সবরকম সহযোগিতা করার আশ্বাসও দেন।

Shera Lather
Link copied!