ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই, ২০২৫

‘আম্মু তুমি বাসায় যাও, আমি আসছি’

বিল্লাল হোসেন, যশোর
প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২৫, ১১:৫০ পিএম
প্রকৌশলী কাজী আজিজুর রহমান ও তার মেয়ে

ফুটফুটে শিশুকণ্ঠে শেষবারের মতো উচ্চারিত হয়েছিল একটি আশ্বস্তির বাক্য- ‘আম্মু তুমি বাসায় যাও, আমি আসছি।’ কিন্তু সেই কথার কিছুক্ষণ পরই মৃত্যুর খবর এসে ভেঙে দেয় ছোট্ট মেয়েটি ও তার মায়ের জীবন।

সাত বছরের কাজী জয়দিয়া সারা যশোর শহরের ষষ্ঠিতলা এলাকার নব কিশলয় স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মা ইশরাত জাহানকে নিয়ে সে এসেছিল বাবার কাছে, প্রকৌশলী কাজী আজিজুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে। তখন তিনি একটি নির্মাণাধীন ভবনের তদারকিতে ব্যস্ত ছিলেন। মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘ কথা হয়নি, শুধু বলেছিলেন- ‘আম্মু তুমি বাসায় যাও, আমি আসছি।’

কিন্তু সেই ফিরে আসা আর হয়নি। ঘণ্টাখানেক পরই স্ত্রী-সন্তানের কাছে খবর আসে, ছয়তলা থেকে সানসেট ধসে পড়ে গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন আজিজুর রহমান।

মেয়েটি ভেঙে পড়া কণ্ঠে বলেন, ‘সকাল থেকেই আব্বুর কথা মনে হচ্ছিল। তাই মাকে নিয়ে গিয়েছিলাম দেখা করতে। আব্বু কাজে ব্যস্ত ছিল, তবুও আমাকে বলেছিল ‘আম্মু তুমি বাসায় যাও, আমি আসছি’। ভাবিনি তিনি এমন করে আমাদের ফাঁকি দিয়ে চিরতরে চলে যাবেন। এখন কে আমাকে আদর করবে? কে আমাকে বুকে জড়িয়ে ঘুম পাড়াবে?’

স্ত্রী ইশরাত জাহান চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, ‘সকালেও কথা হলো। কিছুক্ষণের ব্যবধানে এমন খবর পাবো, তা কল্পনাতেও ছিল না। মনে হচ্ছে, মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। সবকিছু শেষ হয়ে গেল।’

মঙ্গলবার (১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যশোর শহরের নির্মাণাধীন সাততলা ভবনের ছয়তলার সানসেট ভেঙে পড়ে তিনজন নিহত হন। তারা হলেন- প্রকৌশলী কাজী আজিজুর রহমান, মিজানুর রহমান ও শ্রমিক নুরুল রাজ।

আজিজুর রহমান দিনাজপুর নিউটাউন এলাকার কাজী হাসান আলীর ছেলে। চাকরির সুবাদে তিনি স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে যশোর শহরের খড়কি এলাকার ইলিয়াস হোসেনের ভাড়াবাড়িতে বসবাস করতেন।

হাসপাতাল মর্গে স্বামীর নিথর দেহ জড়িয়ে আহাজারিতে ভেঙে পড়েন ইশরাত ও মেয়ে সারা। তাদের কান্নায় হাসপাতাল চত্বরে নেমে আসে ভারী শোকের ছায়া।