ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার বৈচন্ডী গ্রামের মো. শাহজাহান হাওলাদার বর্তমানে ৯৭ বছর বয়সি এক বৃদ্ধ। সরকারি জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৮ উল্লেখ থাকলেও তার প্রকৃত জন্ম ১৯২৯ সালে। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়লেও স্মৃতিতে এখনো টগবগে রণাঙ্গনের গল্প বাঁচিয়ে রেখেছেন তিনি।
১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন শাহজাহান হাওলাদার। কিন্তু আজও তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পাননি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এটাই তার একমাত্র আক্ষেপ।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে শুরু হয় তার জীবনের কঠিন অধ্যায়। ১৯৮৭ সালে পারিবারিক কলহের ঘটনায় নিহত হন তার প্রথম স্ত্রী। সেই অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের সব কাগজপত্র, সার্টিফিকেট ও দলিলাদি। এরপর থেকে বারবার বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও তিনি আর কোনো প্রমাণপত্র সংগ্রহ করতে পারেননি।
জীবনের শেষভাগে এসে তিনি দাবি করছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় রণাঙ্গনে তার অংশগ্রহণের সত্যতা এখনো তিনি স্পষ্টভাবে বলতে পারেন। কে কোথায় যুদ্ধ করেছে, কেমন পরিস্থিতি ছিল সবকিছু এখনো তার স্মৃতিতে অটুট। বয়সের ভারে শারীরিকভাবে দুর্বল হলেও কণ্ঠে ও মনোবল এখনো একজন মুক্তিযোদ্ধার দৃঢ়তা বহন করছে।
শাহজাহান হাওলাদার জানান, পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনি ঢাকা গিয়ে কাগজপত্র যাচাইয়ের চেষ্টা করেছিলেন। তবে রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তিনি হয়রানির শিকার হন এবং এরপর থেকে প্রচেষ্টা চালাননি।
তার বড় ছেলে মো. শহীদ হাওলাদার বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, শাহজাহান হাওলাদার মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমি ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি বাবার যুদ্ধের গল্প। কিন্তু ১৯৮৭ সালের অগ্নিকাণ্ডে সব দলিল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রমাণ আর নেই। আমাদের পরিবারের সব সহকর্মীরাও এ কথা স্বীকার করেন।’
শাহজাহান হাওলাদারের জীবনের এই ক্রান্তিকালে তার একটাই চাওয়া মৃত্যুর আগে রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া। এক সময় স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বর্তমানে তার দ্বিতীয় স্ত্রী শেষ পর্যন্ত তাকে আগলে রেখেছেন।
নলছিটি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. বাকে আলী কাজী বলেন, ‘তিনি আমার সঙ্গে একত্রে রণাঙ্গনে অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু কাগজপত্র হারিয়ে যাওয়ার কারণে তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। এরপরও তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দপ্তরে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।’
৯৭ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে, একজন মুক্তিযোদ্ধার দীর্ঘ জীবনের কষ্ট, আক্ষেপ ও স্বপ্ন এখনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির অপেক্ষায়।


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন