ঢাকা রবিবার, ০২ নভেম্বর, ২০২৫

ঝিনাইদহে কৃষক হত্যায় পুত্রবধূসহ গ্রেপ্তার দুই

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৫, ০৯:২৬ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঝিনাইদহের আলোচিত কৃষক ইসারুদ্দিন মন্ডল ওরফে ইসা (৭০) হত্যার ঘটনায় পুত্রবধূ নয়নতারা ও তার পরকীয়া প্রেমিক রওশন আলীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিকালে নয়ন তারা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তার জবানবন্দির ভিত্তিতে এ দিনই তার পরকীয়া প্রেমিক রওশন আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে শুক্রবার নিহতের ভাই মিক্কাস আলী বাদি হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করে।

নয়নতারা নিহত ইসারুদ্দিন মন্ডল ইসার ছোট ছেলে মিলনের স্ত্রী এবং রওশন আলী হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হিঙ্গারপাড়া গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে।

শনিবার (১ নভেম্বর) রাতে ঝিনাইদহ সদর থানায় সাংবাদিকদের মামলার তদন্ত অগ্রগতি সম্পর্কে জানান সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজ হোসেন।

তিনি বলেন, ১৫ বছর আগে নিহত ইসারুদ্দিন মন্ডলের স্ত্রী মারা যায়। বড় ছেলে জুলহক একজন কৃষক ও ছোট ছেলে মিলন চায়ের দোকানদার। ইসারুদ্দিন মন্ডল ছোট ছেলের সংসারে থাকতেন। চায়ের দোকান চালানোর কারণে মিলন দিনের বেশিরভাগ সময়ে বাড়ির বাইরে থাকেন। সেই সুযোগে স্ত্রী নয়নতারা কাচামাল ব্যবসায়ী রওশন আলীর সাথে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাড়িতে পুত্রবধূ নয়ন তারার সাথে রওশন আলীকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন ইসারুদ্দিন মন্ডল। এসময় তিনি রওশন আলীকে জিজ্ঞাসা করতে গেলে রওশন আলী অবৈধ সম্পর্ক জানাজানির ভয়ে এক সহযোগীকে ডেকে নিয়ে আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৮ মধ্যে রাঙ্গিয়ারপোতা মাঠে নিয়ে গিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

পলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ঘাতক রওশন আলী এই হত্যাকাণ্ডকে আত্মহত্যার ঘটনায় রুপ দিতে নিহত ইসারুদ্দিন মন্ডলের গলায় রশি বেধে গাছে ঝুলিয়ে রাখার পরিকল্পনা করে। তিনি কাচামাল ব্যবসায়ী হওয়ায় তার ব্যাগে রশি ছিল। কিন্তু ধরা পড়ার ভয়ে মরদেহের হাত-পায়ে রশি দিয়ে বেধে ধান ক্ষেতে ফেলে পালিয়ে যায়।

পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজ হোসেন বলেন, গ্রামের লোকজনের সাথে কথা বলে আমরা জানতে পারি ইসারুদ্দিন মন্ডল খুবই ভালো মানুষ। গ্রামের কারো সাথেই তার দ্বন্দ্ব বিবাদ ছিলো না। তিনি কৃষক মানুষ, কৃষি কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। এমনকি গ্রামের চায়ের দোকানেও তিনি বসতেন না।

তখন আমরা পরিবারের কারো সাথে দ্বন্দ্ব বা জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে কিনা তদন্ত শুরু করি। এক পর্যায়ে তার পুত্রবধূর সাথে রওশন আলীর অবৈধ সম্পর্কের তথ্য পাই। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই তথ্য নিশ্চিত হয়ে পুত্রবধূ নয়নতারাকে গ্রেপ্তার করি।

নয়নতারা বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তার জবানবন্দির ভিত্তিতে আমরা রওশন আলীকে গ্রেপ্তার করি। রওশন আলী হত্যার কারণসহ বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে সে। আমরা রওশন আলীর সহযোগীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।

উল্লেখ্য: বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার রাঙ্গিয়ারপোতা-বংকিরা সড়কের একটি ধানক্ষেত থেকে কৃষক ইসারুদ্দিন মন্ডল ওরফে ইসার হাত-পা বাধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এদিন থেকে হত্যার রহস্য উদঘাটন ও ঘাতকদের গ্রেপ্তারে মাঠে নামে পুলিশ।