তেল আনতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ গেল খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার এক তরুণ জিপচালক তইচিং মারমার (২০)। বাড়িতে অপেক্ষায় ছিলেন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, মা ও উৎকণ্ঠিত বাবা। কিন্তু সেই অপেক্ষা শেষ হয় লাশের খবরে।
পরিবারের দাবি, সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তইচিংকে মারধরও করা হয়। প্রশাসনের উপস্থিতিতে রাতেই তার মরদেহ দাহ করা হয়েছে- পরিবারকে লাশ বুঝিয়ে না দিয়ে।
নিহতের বড় ভাই উখ্যচিং মারমা জানান, আমরা লাশ পাইনি। শুধু মুখটা দেখতে দেওয়া হয়েছিল- তাও থেঁতলানো। আমরা শুনেছি, তার পায়ে গুলি লেগেছিল। তারপর তাকে মেরে ফেলা হয়।’
তইচিংয়ের বাবা হলাচাই মারমা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সকাল ১১টার দিকে সে আমার সঙ্গে বসে ভাত খায়। তারপর তার জিপের মালিক ফোন করে তেল আনতে বলে। সে রামসু বাজারে যায়। এরপর আর ফিরেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারা দিন খোঁজ করেও তাকে কোথাও পাইনি। সন্ধ্যায় তার মোবাইলে কল দিলে এক পুলিশ অফিসার ধরে। তখনো জানায়নি সে মারা গেছে। খাগড়াছড়ি হাসপাতালে গিয়ে রাত ৮টার দিকে ছেলের মরদেহ শনাক্ত করি।’
তইচিংয়ের পরিবার বলছে, সে কখনো কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়নি। অল্প বয়স থেকে জিপ চালিয়ে পরিবারের হাল ধরেছিল।
বাবা হলাচাই বলেন, ‘মাত্র বছরখানেক আগে বিয়ে দিয়েছিলাম। ওর স্ত্রী এখন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কোনো দোষ না করেই মেয়েটা বিধবা হয়ে গেল।’
হলাচাই মারমা বলেন, ‘আমার ছেলে তো আর ফিরবে না। আমি মামলা করব না। শুধু চাই, সরকার যেন তার স্ত্রী ও অনাগত সন্তানের পাশে দাঁড়ায়। মেয়েটা শিক্ষিত- তাকে একটা চাকরি দেওয়া হোক, যাতে সে সন্তান নিয়ে বাঁচতে পারে।’
গত শনিবার সকালে খাগড়াছড়িতে এক মারমা কিশোরীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ নামে একটি সংগঠন অবরোধের ডাক দেয়। অবরোধ চলাকালে গুইমারা উপজেলার রামসু বাজারে পাহাড়ি, স্থানীয় বাঙালি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এ সময় তইচিং মারমাসহ তিন মারমা অধিবাসী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। আহত হন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ১৬ জন। নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সোমবার রাতে প্রশাসনের উপস্থিতিতে দাহ করা হয়।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন