ঢাকা শনিবার, ০৭ জুন, ২০২৫

এবারও শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির ঢল

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২৫, ১২:১৫ পিএম
ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদুল আজহার জামাতের একাংশ। ছবি- সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া মাঠে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ঈদের নামাজ। এটি ছিল শোলাকিয়ায় ঈদুল আজহার ১৯৮তম নামাজ। গত কয়েকদিন ধরেই থেমে থেমে বৃষ্টি। তাই মাঠ কিছুটা কর্দমাক্ত। তবে ঈদের আগেরদিন সূর্যের কিছুটা দেখা মেলে। আর তাতে স্বস্তি পান মাঠে আসা মুসল্লিরা।

শনিবার (৭ জুন) সকাল ৯টায় শুরু হয় ঈদের নামাজ। এতে ইমামতি করেন ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক কারণে ইমামতি থেকে বাদ দেওয়া হয় তাকে। এবার নতুন করে আবার পুনর্বহাল করায় তিনিও অত্যন্ত আনন্দিত।

শোলাকিয়া মাঠে প্রবেশে বিভিন্ন মোড়ে পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি পার হয়ে আসতে হয়েছে মুসল্লিদের। তার মধ্যে পুরান থানা মোড়, সতাল মোড়, গাছ বাজার মোড়, আজিম উদ্দিন স্কুল মোড়, নীলগঞ্জ মোড়, কানিকাটা মোড়ে পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি ছিল। মাঠে প্রবেশে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। মাঠে প্রবেশের গেটে আর্চওয়ের মাধ্যমে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে ভেতরে ঢুকানো হয়েছে মুসল্লিদের।

ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহা. কাজেম উদ্দীন বলেন, শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো এলাকার ফুটেজগুলো আমরা সংগ্রহ করেছি। এছাড়া প্রত্যেকটি গেটে আর্চওয়ে ছিল। এর মধ্যে দিয়ে এ নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে মাঠে প্রবেশ করতে হয়েছে মুসল্লিদের।

এ ছাড়া প্রত্যেককে সার্চ করার জন্য মেটাল ডিটেক্টর ছিল। মুসল্লিদের প্রবেশ পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তা ফোর্স দিয়ে চেকপোস্ট ডিউটি করেছে। আশপাশে যেসব স্থাপনা রয়েছে, প্রত্যেকটা স্থাপনাতে পুলিশ ডিউটিতে আছে। মাঠের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। এখন মুসল্লিদের সুস্থভাবে বাড়ি ফেরার আশায় আছি।

জেলা প্রশাসক ও ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা এখানে নামাজ আদায় করতে আসেন। তাদের জন্য সুপেয় পানি ও পর্যাপ্ত পরিমাণে অজুর পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মুসল্লিদের জন্য পর্যাপ্ত ওয়াশরুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুসল্লিদের কোনো শারীরিক সমস্যা হলে এখানে মেডিকেল ক্যাম্প রয়েছে তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এখানে কাজ করেছে। ওয়াচ টাওয়ার ও মাঠের আশপাশে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে যেন নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়।

তিনি আরও বলেন, পর্যাপ্ত পুলিশ, র‌্যাব, আনসারসহ আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করেছে। দূর দূরান্তের মুসল্লিদের ঈদের জামাতে অংশগ্রহণের জন্য ‘শোলাকিয়া এক্সপ্রেস’ নামে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা ছিল। শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ লাইনে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।

জনশ্রুতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত। প্রতি বছরের মতো এবারও শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির ঢল নেমেছে।