ঢাকা সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

লালমনিরহাটে জনপ্রিয় হচ্ছে চুইঝাল চাষ

হাসানুজ্জামান হাসান, কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট)
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫, ০১:৫০ পিএম
লালমনিরহাটে চুইঝাল সংগ্রহ করছেন কৃষক। ছবি- সংগৃহীত

একসময় শুধু খুলনা অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল চুইঝালের চাষ। এখন সেই মসলাজাতীয় লতাগাছ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের নানা প্রান্তে। উত্তরাঞ্চলের জেলা লালমনিরহাটেও দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে চুইঝাল চাষ, যা সাধারণ কৃষকদের ঘরে আনছে বাড়তি আয়, আর জেলায় তৈরি হচ্ছে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।

চুইঝাল মূলত একটি লতাজাতীয় মসলা উদ্ভিদ, যা অন্য গাছ বেয়ে বেড়ে ওঠে। স্থানীয়ভাবে একে ‘চুইপান’ নামেও ডাকা হয়। বিশেষ জমি ছাড়াই বাড়ির সুপারি, নারিকেল, আম কিংবা কাঁঠালের গাছে চুইঝালের চারা রোপণ করে সহজেই চাষ করা যায়।

সরেজমিনে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলায় দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ২-৪টি চুইঝালগাছ রয়েছে। কৃষকরা জানাচ্ছেন, কোনো প্রকার সার, কীটনাশক কিংবা অতিরিক্ত যত্ন ছাড়াই একবার রোপণ করলেই কয়েক বছর ধরে চুইঝাল সংগ্রহ করা যায়।

কালীগঞ্জের মদাতি ইউনিয়নের চাষি মনিরুজ্জামান জানান, তিনি এ বছর ৩০টি গাছে চুইঝাল রোপণ করেছেন। বিনা খরচে চাষ করা এই গাছগুলো থেকে আগামী তিন বছরের মধ্যে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করার আশাবাদী তিনি।

লালমনিরহাটের গাছে গাছে চুইঝাল চাষ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

অন্যদিকে, প্রদীপ কুমার নামে আরেক চাষি ১৫০টি গাছে চুইঝালের চারা লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দুই বছর পরেই ভালো আয় হবে বলে আশা করছি। কোনো খরচ ছাড়াই এত লাভজনক চাষ আর দেখি নাই।’

বড়বাড়ী ইউনিয়নের চাষি আব্দুল জলিল জানান, ১৫ বছর আগে বাড়ির গাছে চুইঝাল লাগিয়েছিলাম। এখন প্রতিটি গাছ থেকেই বছরে ১২ থেকে ২০ হাজার টাকার চুইঝাল বিক্রি করছি। অনেক ক্রেতা তো সরাসরি বাড়ি থেকেই নিয়ে যায়।

জেলা কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে লালমনিরহাট জেলায় প্রায় ২৬ হাজার চুইঝালগাছ রয়েছে, যা ছড়িয়ে আছে প্রায় ৪৭০ বিঘা জমির সমপরিমাণ এলাকায়। প্রতি বছর প্রায় ১০ কোটি টাকার চুইঝালের লেনদেন হয় এই জেলায়।

চুইঝাল সংগ্রহ করছেন লালমনিরহাটের কৃষক। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গ্রামে ঘুরে ঘুরে তারা চুইঝাল সংগ্রহ করেন এবং পরে আড়ৎদারদের কাছে বিক্রি করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব মসলা সংগ্রহের জন্য পাইকাররা লালমনিরহাটে আসছেন নিয়মিত।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায় বলেন, ‘চুইঝাল চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। আমরা বিভিন্ন ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে তাদের উৎসাহ দিচ্ছি, কারণ এটি বাড়তি জমি ছাড়াই করা যায় এবং লাভও হয় ভালো।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সাইখুল আরিফিন বলেন, ‘লাভজনক এই মসলাটি চাষে আমরা প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের সহায়তা করছি। চুইঝাল চাষ লালমনিরহাটের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।’