বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর আল্লামা মামুনুল হক বলেছেন, চব্বিশের বিপ্লবে যারা বুক চিতিয়ে জীবন দিয়েছিলেন, তাদের সিংহভাগ ছিলেন আলেম সমাজ। জীবন ও রক্তের বিনিময়ে দেশকে বিদেশি আধিপত্যমুক্ত, ফ্যাসিবাদমুক্ত করা হয়েছে। নতুন করে আবার বিদেশি পরাজিত শক্তি অন্য কারও প্রভাবে বাংলার মানুষকে জিঞ্জিরাবদ্ধ করতে চাইলে তা বরদাশত করা হবে না।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা শাখার আয়োজনে সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ। বিগত সময়ে যারা ক্ষমতার মসনদে ছিলেন, তারা দেশের প্রতিনিধি ছিলেন না; বরং ভিনদেশি কৃতদাসীর মতো ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলেন। এ দেশের মানুষের অধিকার আদায় নয়, ভিনদেশিদের স্বার্থ আদায় করাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। দেশটাকে উজাড় করে সোনার বাংলাকে শ্মশান বানিয়ে মানুষের রক্ত ও জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে দেশটাকে গুমের রাজত্বে পরিণত করা হয়েছিল। বাংলাদেশকে মৃত্যুকূপে পরিণত করা হয়েছিল। আলেম–ওলামা ও ইসলামী জনতার ওপর স্টিমরোলার চালানো হয়েছিল।
মামুনুল হক বলেন, ইসলামী জনতাকে বারবার বুলেটের আঘাতে হত্যা করা হয়েছে। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে নির্বিচারে পাখির মতো গুলি করা হয়। ২০২১ সালে মোদি–বিরোধী আন্দোলনের কারণে আলেমদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে আপামর তাওহীদি জনতা, ছাত্র জনতা, কৃষক–শ্রমিক–মজুরদের হত্যা করে বাংলাদেশকে রক্তে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ইসলামী নেতৃবৃন্দকে বছরের পর বছর বিনা বিচারে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল। জেল–জুলুম–হুলিয়া চালানো হয়েছিল, ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়েছিল। কারাগারে বিনা চিকিৎসায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আলেমদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০২৪—এই ১৬ বছর ছিল আলেম–ওলামা তথা ইসলামপন্থীদের রক্ত, ত্যাগ ও কোরবানির সময়। সব জুলুম–নির্যাতনের পর চব্বিশের বিপ্লব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিগত দিনে ঐক্যবদ্ধ জনগণ যাদের প্রতিহত করেছে, তারা এখন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে দেশের মানুষকে জিম্মি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা শপথ করছি—জীবন দিয়ে যে ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত করেছি, সেই ফ্যাসিবাদ যদি ভিন্ন রূপে বাংলার ক্ষমতার মসনদে আসার পাঁয়তারা করে, আমরা রাজপথে লড়াই করে তা মোকাবিলা করব, ইনশাআল্লাহ।
প্রসঙ্গক্রমে মামুনুল হক চাঁদাবাজি, লুটপাট, দুর্নীতি বন্ধ এবং ‘জুলাই সনদ’-এর আইনি ভিত্তি বাস্তবায়নে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীকের পাশাপাশি গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ব্যালটে সিল দেওয়ার আহ্বান জানান।
খেলাফত মজলিস উপজেলা শাখার সভাপতি হাফেজ আব্দুল লতিফের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন—খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব আতাউল্লাহ আমীন, নায়েবে আমীর শাহ মুহাম্মদ সাঈদ নূর, মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ হাদী, ফুলবাড়িয়া আসনে খেলাফত মজলিস–মনোনীত প্রার্থী মুফতি আব্দুল কাদের এবং জামায়াত–মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ কামরুল হাসান মিলন প্রমুখ।



