ঢাকা শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

লালমনিরহাটে দুর্গোৎসব উপলক্ষে প্রস্তুত ৪৬৮টি পূজা মণ্ডপ

কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৫, ১২:০২ পিএম
পূজা মণ্ডপ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গোৎসব আবহমান বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর ক’দিন পরেই শুরু হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এ উপলক্ষে লালমনিরহাট জেলায় বইছে উৎসবের আমেজ। জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রতিমা তৈরিসহ নানা প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগর ও আয়োজকরা। দিন-রাত নিরলস পরিশ্রম করে সাজানো হচ্ছে পূজামণ্ডপ।

আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে এই পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজা, যা শেষ হবে ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ বছর লালমনিরহাট জেলায় মোট ৪৬৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে লালমনিরহাট সদরে ১৬২টি, আদিতমারীতে ১১৪টি, কালীগঞ্জে ৯১টি, হাতীবান্ধায় ৭২টি এবং পাটগ্রাম উপজেলায় ২৯টি পূজামণ্ডপ স্থাপন করা হয়েছে।

শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে একাধিক মতবিনিময় সভা করেছে। পাশাপাশি জেলা বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও মণ্ডপ পরিদর্শন করছেন এবং সনাতনী সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে উৎসব নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জেলার বেশির ভাগ মণ্ডপে প্রথম দফার মাটির কাজ শেষ হয়ে গেছে এবং এখন চলছে রং ও সাজসজ্জার কাজ। জেলা শহরের শ্রী গৌরীশংকর গোশালা সোসাইটি দুর্গা মন্দির, কালীবাড়ি সর্বজনীন দুর্গা মন্দির ও কাচারীবাড়ি সর্বজনীন দুর্গা মন্দিরে চলছে প্রতিমা নির্মাণের ব্যস্ততা।

এ ছাড়া গ্রামীণ পর্যায়ের বুড়িরদিঘী, কার্জীটারী, রাধাকৃষ্ণ সর্বজনীন মন্দির, বড়বাড়ী বাজার, বানিয়ার দিঘী, সাকোয়া মাসানকুড়া, ছড়ারপাড়, বনগ্রাম ও দুড়াকুটি দক্ষিণপাড়া সর্বজনীন দুর্গা মন্দিরেও প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

প্রতিমা নির্মাণে কারিগররা প্রতিমা অনুযায়ী, ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক নিচ্ছেন। প্রতিমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন মাটি, বাঁশ ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করছে সংশ্লিষ্ট মন্দির কর্তৃপক্ষ।

কালীগঞ্জ উপজেলার প্রতিমা শিল্পী সুবল চন্দ্র বলেন, ‘মাটির কাজ প্রায় শেষ, এখন শুরু হবে রংতুলির আঁচড়। প্রতিমাগুলো নিখুঁতভাবে গড়ে তোলার জন্য আমরা সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছি।’ তিনি এ বছর পাঁচটি মণ্ডপের প্রতিমা তৈরি করছেন এবং সময়ের আগেই কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

বড়বাড়ী বাজার শিবকালী ও দুর্গা মন্দিরের সভাপতি নিমাই চন্দ্র পাল বলেন, ‘প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা আনন্দঘন পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপন করতে যাচ্ছি।’

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি হীরালাল রায় জানান, ‘প্রতিটি মণ্ডপে কাজ চলমান রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’ এ বিষয়ে একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও তিনি জানান।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ (কল্যাণ ফ্রন্ট) জেলা শাখার সভাপতি গুরুচরণ রায় বলেন, ‘আশা করি, প্রতি বছরের মতো এবারও শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে।’

জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার কোনো ষড়যন্ত্রই এ দেশে সফল হবে না। সনাতনী ভাইবোনেরা যেন নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপন করতে পারেন, সে লক্ষ্যে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। আমরা সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ মিলে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’

জেলা পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম জানান, ‘শারদীয় দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশের বিশেষ নজরদারি থাকবে এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও সক্রিয়ভাবে কাজ করবেন।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ‘দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে জেলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’