খেজুর আমাদের অতিপরিচিত একটি ফল। মুসলিম সমাজে রোজা ভাঙা থেকে শুরু করে নানা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে খেজুরের ব্যবহার রয়েছে। তবে ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক গুরুত্ব ছাড়াও খেজুরে আছে অসাধারণ পুষ্টিগুণ। ছোট্ট এ ফলটিতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার, প্রাকৃতিক চিনি, ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। নিয়মিত খেজুর খেলে শরীর যেমন শক্তি পায়, তেমনি মেলে নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।
তবে খেজুর খাওয়ার সঠিক সময় নিয়েও অনেকের মনে কৌতূহল থাকে। কেউ বলেন, রাতে ঘুমানোর আগে খেজুর খাওয়া ভালো। আবার কেউ পরামর্শ দেন খালি পেটে খেজুর খাওয়ার জন্য। আবার কেউ কেউ ভাবেন, খেজুর ভিজিয়ে খাওয়াই বেশি উপকারী?
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, খেজুর খাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো বাধ্যতামূলক সময় নেই। যদিও কয়েকটি সময়ে খেলে এর উপকারিতা অনেকটা বেড়ে যায়।
খেজুর খাওয়ার সেরা সময়
ব্যায়ামের আগে
খেজুরে থাকা প্রাকৃতিক চিনি শরীরে ধীরে ধীরে শক্তি জোগায়। ব্যায়ামের ৩০-৬০ মিনিট আগে ২-৪টি খেজুর খেলে দীর্ঘ সময় শরীর সক্রিয় থাকে। যারা নিয়মিত জিম বা ওয়ার্কআউট করেন, তাদের জন্য খেজুর হতে পারে প্রাকৃতিক এনার্জি বুস্টার।
ভোরে খালি পেটে
সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে শরীর দ্রুত শক্তি পায়। এটি অন্ত্র পরিষ্কার রাখে, পরিপাকতন্ত্রকে সক্রিয় করে এবং হৃদ্যন্ত্র ও লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে। দিনের শুরুটা হালকা ও শক্তিদায়ক করতে খালি পেটে খেজুর খাওয়া দারুণ উপকারী।
রাতের খাবারের পরে বা ঘুমের আগে
খেজুরে থাকা ফাইবার দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে। ফলে রাতে অকারণে ক্ষুধা বা স্ন্যাকস খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। ঘুমের আগে কয়েকটি খেজুর খেলে এটি স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক হিসেবে কাজ করে, আবার হজমেও সহায়তা করে।
খেজুর খেলে যে উপকার মিলবে
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, হাড়কে শক্তিশালী করে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, মস্তিষ্ক ও হৃদ্যন্ত্র সুস্থ রাখে, অ্যালঝাইমার ও ক্যানসারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়, ত্বক ও চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনে, ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিস রোগীরাও চিকিৎসকের পরামর্শে খেজুর খেতে পারেন। এতে থাকা পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের প্রদাহ কমাতে ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
কখন খেজুর খাওয়া উচিত নয়
ভারী খাবারের পরপরই: হজমে সমস্যা, পেটে গ্যাস বা ফাঁপা ভাব তৈরি হতে পারে।
ডায়রিয়া হলে: খেজুরে থাকা সোর্ভিটল পাতলা পায়খানা বাড়িয়ে দিতে পারে।
অ্যালার্জি বা আইবিএস রোগীদের জন্য: উচ্চ ফ্রুক্টোজ হজমের সমস্যা বাড়াতে পারে।
খেজুর খাওয়ার নির্দিষ্ট সময় না থাকলেও সকালে খালি পেটে, ব্যায়ামের আগে কিংবা রাতে ঘুমের আগে খেলে এর গুণাগুণ সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। তবে সব খাবারের মতোই খেজুর খেতেও পরিমিতি বজায় রাখা জরুরি। নিয়মিত কয়েকটি খেজুর শরীরকে যেমন প্রয়োজনীয় শক্তি জোগাবে, তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়াবে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস