বেকারত্বের বোঝা ও ভালো ভবিষ্যতের আশায় অবৈধ পথে বিদেশগামীর সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। বিশেষ করে ইতালিগামী যুবকদের লক্ষ্য করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মানব পাচারচক্র। যাত্রার আগে দালালরা নানা লোভনীয় প্রলোভন দেখালেও লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর অধিকাংশ প্রতিশ্রুতিই পরিণত হচ্ছে প্রতারণা, নির্যাতন ও মুক্তিপণ বাণিজ্যে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়— শিবচরের তিন যুবককে হাত-পা বেঁধে অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদের মুক্তির জন্য পাচারকারীরা দাবি করেছে ৬০ লাখ টাকা।
আটক তিন যুবক হলেন—আলমাছ, সজিব, সবুজ। তারা মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাশকান্দি ইউনিয়নের নাওয়ারা চরশেখপুর এলাকার বাসিন্দা। ভিডিও ফুটেজ দেখে ধারণা করা হচ্ছে, তারা লিবিয়ার মরুভূমি বা সীমান্তবর্তী একটি এলাকায় সশস্ত্র মানব পাচারচক্রের কাছে বন্দি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, পাচারকারীরা নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে বারবার ফোন করে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। মুক্তিপণ না দিলে আরও মারধর বা হত্যা করার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। এতে পরিবারগুলো চরম আতঙ্ক ও আর্থিক দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এ ধরনের নির্যাতন মানবপাচারের ভয়াবহতার একটি নগ্ন উদাহরণ। তাদের মতে, অবৈধ অভিবাসন এখন শুধু অর্থনৈতিক অপরাধ নয়; বরং এটি মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। তরুণদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পাচারচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিবচর থানা ওসি মো. রকিবুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ইতোমধ্যে দুজনকে আটক করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। ওসি আরও জানান, দালালচক্রের অন্যান্য সদস্যদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, বিদেশে ভালো জীবনের আশায় যুবকদের জীবন যেন মানবপাচারচক্রের হাতে জিম্মি না হয়— এজন্য সকলের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। মানবপাচার প্রতিরোধে প্রশাসনের পাশাপাশি পরিবার, স্থানীয় জনসংগঠন ও জনসচেতনতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


