মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় দলীয় মনোনয়ন ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গাড়ি ও অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নারীসহ উভয় গ্রুপের অন্তত ১০-১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার হোসেন্দি ইউনিয়নের জামালদি স্ট্যান্ড এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়েছে। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
মহিউদ্দিন আহমেদ সমর্থক গ্রুপের আহতরা হলেন- কবির হোসেনের ছেলে স্বাধীন (২৫), কবির হোসেনের স্ত্রী শিরিনা বেগম (৪৫), আজিজের ছেলে মোস্তফা (৪৭), আনোয়ার (৩৮), শাহিদা (৪৫) এবং কবির হোসেনের ছেলে শান্ত (৩০)। তাদের মধ্যে স্বাধীনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
কামরুজ্জামান রতনের পক্ষে আহত হয়েছেন মৃত সোনা মিয়ার ছেলে দেলোয়ার (৪৫), আলী মিয়ার ছেলে সাইদুল (২৫), ফজলুর রহমানের ছেলে সুজন (২৫), মাসুম মীরের ছেলে আসিফ মীর (২০) এবং অজ্ঞাত একজন নয়ন (২৫)।
গতকাল মঙ্গলবার সারা দেশের ৩৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। এ ঘোষণায় মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন পান বিএনপির কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান রতন। মনোনয়ন বঞ্চিত হন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। এ নিয়েই সমর্থকদের মাঝে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয় এবং দুই গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে যায়।
জামালদী স্ট্যান্ড এলাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার বলেন, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মহিউদ্দিন গ্রুপ মশাল মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। অপরদিকে যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুম আহমেদ ও মমিন মৃধার নেতৃত্বে রতন গ্রুপ মহাসড়কের পাশে অবস্থান করছিল। হঠাৎ দুই পক্ষ মুখোমুখি হয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আলি হোসেনের দাবি, আমরা মিছিলের জন্য ছাদের উপর ফেস্টুনের জন্য কাঠ, বাঁশের মধ্যে দুধের কৌটা লাগিয়েছিলাম মিছিলের প্রস্তুতি নেবার জন্য। হঠাৎ তারা শর্টগান দিয়ে গুলি করতে করতে আমার অফিসের দিকে আসে, হামলা চালিয়ে আমার গাড়ি, অফিস ভাঙচুর করে এবং আমাদের ৬-৭ জনকে পিটিয়ে আহত করেছে।
গতকাল আমি ব্যাংক থেকে ২৫ লাখ টাকা উত্তোলন করেছি। সেখানে থেকে কিছু টাকা খরচ করলেও বাকি অফিসের দ্যারে ছিল। তা ছাড়া আইডি কার্ড, কিছু দলিলসহ কয়েকটি ব্যাংকের বইও সব নিয়ে গেছে।
হোসেন্দি ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মমিন মৃধা বলেন, ‘কামরুজ্জামান রতন ভাই মনোনয়ন পাওয়ায় আমরা আনন্দ মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ আলী হোসেনের অফিস থেকে গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হলে আমরা আত্মরক্ষায় প্রতিহত করি।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. মাসুদ ফারুকের দাবি, এটি বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ নয়। রতন ভাইয়ের মনোনয়ন পাওয়ায় গজারিয়াবাসী আনন্দ প্রকাশ করছিল। আওয়ামী দোসররা এসে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে।
এ বিষয়ে স্বাধীন জানান, আমি সাধারণ মানুষ, আমি কোনো দল করি না, আমি মুরগি বিক্রি করি স্ট্যান্ডে থাকি, মাঝে মাঝে নানা কাজে আলী ভাইয়ের অফিসে যাই। এটাই কি আমার দোষ? আমার মাথায় কোপ দিয়েছে, হাতের রগ কেটে, পায়ে আঘাত করেছে। এখন বেশি কথা বলতে পারছি না, আমার বুমি বুমি লাগছে।
স্বাধীনের বাবা কবির হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলের কি দোষ, আমার স্ত্রীকেও আঘাত করছে। আমার ছেলেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে জরুরি অপারেশন করতে হবে, সেখান থেকে তাকে নাকি অন্য হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিতে হবে।’
গজারিয়া থানার ওসি আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়েছি। বর্তমানে পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখানে একটি গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে, দুই পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে গুলিগুলির কোনো তথ্য পাইনি কিংবা গুলিবিদ্ধ হয়েছে এমন কোনো খবরও নেই।’
মহিউদ্দিন আহমেদ সমর্থিত গ্রুপ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে অগ্নি মিছিল করার পরিকল্পনা করেছে। মাগরিব নামাজের পর তারা মহাসড়কে উঠবে। তাদের পরিকল্পনার পূর্বেই মনোনয়নপ্রাপ্ত দেড়শো থেকে দুইশো মানুষের একটি গ্রুপ হঠাৎ আক্রমণ করলে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ চলে প্রায় ১০-১৫ মিনিট। এমনটাই জানান জামালদি স্ট্যান্ডে থাকা এক ভ্রাম্যমণভ্রাম্যমান দোকানদার।
জামালদি স্ট্যান্ডে অগ্নি মিছিল বানচাল হলেও উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের রসুলপুর খেয়াঘাট এলাকায় মনোনয়ন বঞ্চিত মহিউদ্দিন আহমেদ সমর্থক গ্রুপ একটি অগ্নি মশাল মিছিল করেছে।
-20251205195845.webp)


