বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৫, ০৯:৫২ পিএম

‘অনিয়মই নিয়ম’ ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৫, ০৯:৫২ পিএম

‘অনিয়মই নিয়ম’ ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে

ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার। ছবি-সংগৃহীত

ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে ঘুষ, দুর্নীতি আর বন্দির স্বজনদের ‘জিম্মি’ করে অর্থ আদায়ের ঘটনা যেন ‘ওপেন সিক্রেট’ ব্যাপার। অভিযোগ রয়েছে, জামিনে মুক্ত আসামিকে শ্যোন এরেস্টের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করা হয়। আসামিদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে মাদক ও মোবাইল।

এ ছাড়া বন্দির স্বজনরা সাক্ষাতে গেলে বিভিন্নভাবে করা হয় হয়রানিও। সব মিলিয়ে ‘নৈরাজ্যের রাজ্যে’ পরিণত হয়েছে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার।

বন্দির স্বজনদের অভিযোগ, দুর্নীত, ঘুষ, অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের ঘটনা জেলখানার কর্তারা জানলেও নেওয়া হয় না কোনো ব্যবস্থা।

কারাগার সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সপ্তাহখানেক আগে কারাগারের ক্যান্টিনে অতিরিক্ত মূল্য রাখা এবং বন্দিদের কাছে প্রয়োজনীয় জিনিস পাঠানোর ক্ষেত্রে টাকা নেওয়ার ঘটনায় প্রধান কারারক্ষী মো. জুলহাস উদ্দিনের কাছে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী এক স্বজন। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার মোবাইলে নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও প্রধান কারারক্ষী মো. জুলহাস উদ্দিনের বক্তব্য নেওয়া যায়নি

কারাগারে দায়িত্ব পালন করা একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রতিদিন কারাগারের ভেতরে ৩৫০ জন কারারক্ষীর ডিউটি বণ্টন করা হয়। মেডিকেল ও কারাগারের ভেতর ও বাইরের ৩টি ক্যান্টিন এবং বন্দিদের সাক্ষাৎ সংশ্লিষ্ট স্থানে ডিউটি পাইয়ে দিতে ঘুষ গ্রহণ করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত লাইস সহকারী (কারারক্ষী) মো. আব্দুল আউয়াল। এ নিয়ে কারারক্ষীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।          

বন্দিদের স্বজনরা অভিযোগ করেন, কারাগারে বন্দিদের কাপড়, খাবার, ওষুধ বা প্রয়োজনীয় কোনো কিছু দিতে গেলে যেতে হয় ক্যান্টিনে। এতে টাকা দেওয়ার কোনো বিধান নেই। কিন্তু ক্যান্টিনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কারারক্ষীরা টাকা না দিলে বন্দিদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠাতে বাধা দেন। আইনের অজুহাত দেখান। ফলে বাধ্য হয়েই বন্দির স্বজনরা টাকা দিয়ে কাজ করান। 

অভিযোগ রয়েছে, কারারক্ষীদের মাধ্যমে বন্দি আসামিদের কাছে মাদক সরবরাহের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা বেশ কয়েকবার ধরাও পড়েছে। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে এরই পূর্বে বেশ কয়েকজনকে শাস্তিমূলক বদলি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে মো. রাসেল মিয়া নামের এক কারারক্ষী বন্দিদের মাদক দিতে গিয়ে ধরা পড়েন সুমন নামের অপর এক কারারক্ষীর কাছে। 

এ নিয়ে কারাগারের ভেতরে তোলপাড় হলেও শেষে আর্থিক লেনদেনে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া হয়। এতে প্রত্যক্ষ মদদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট লাইস সহকারী আব্দুল আউয়ালসহ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। 

নগরীর বাউন্ডারি রোড এলাকার বাসিন্দা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, কারাগারের মেডিকেলে কোনো আসামি থাকলে হলে সরকারিভাবে টাকা দেওয়ার নিয়ম নেই। অথচ আসামিদের কাছ থেকে প্রতি মাসে আদায় করা হয় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। বর্তমানেও কারাগারের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাজনৈতিক মামলার আসামির কাছ থেকে গত দুই মাসে ২০ হাজার করে ৪০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে।

কারাগারের পিআইইউ সদস্য মানসুর আলী, বিকাশ চন্দ্র ও রেজাউল করিমের মাধ্যমে এই অর্থ আদায় করা হয় বলে তিনি জানান।        
 
নগরীর চরপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী মো. বজলুর রহমান বলেন, ‘যেকোনো রাজনৈতিক মামলার আসামির জামিন হলে তাদের শ্যোন এরেস্টের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। জামিনে মুক্তি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কারারক্ষী আলমগীর হোসেন ও আতাহার আলী এভাবে বিকাশ ও নগদে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।’
    
জানতে চাইলে পিআইইউ সদস্য মানসুর আলী বলেন, ‘টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

এ ঘটনায় জড়িত সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।    

ময়মনসিংহ নগরীর সানকিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘আমার এক স্বজন কারাগারে বন্দি। গত কয়েকদিন আগে আমি তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। তখন তার জন্য কিছু শুকনা খাবার ও কাপড় দিতে গিয়ে ক্যান্টিনে টাকা দিতে হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে বাধ্য হয়েই চড়া মূল্যে কিনতে হয়েছে প্রয়োজনীয় পণ্য।’

গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আল মামুন বলেন, ‘কারাগারের ক্যান্টিনে প্রতিটি পণ্যে ‘গলাকাটা’ মূল্য রাখা হয়। বাইরের দোকান থেকে পণ্য কিনে কারাগারে পাঠাতে চাইলে ক্যান্টিনে তা গ্রহণ করা হয় না। এভাবে প্রতিদিন তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বন্দিদের স্বজনের কাছ থেকে।’

এরকম অভিযোগ অসংখ্য বন্দির স্বজনদের। ভুক্তভোগীদের দাবি, সরেজমিনে পরিচয় গোপন করে এসব অভিযোগ তদন্ত করলেই ঘুষ গ্রহণ ও টাকা আদায়ের প্রমাণ পাওয়া যাবে।    
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কারারক্ষী অভিযোগ করে বলেন, ‘লাইস সহকারীর চাহিদামতো টাকা না দিলে সুবিধাজনক স্থানে কেউ ডিউটি পায় না। তবে যারা তাকে মাসোহারা ভিত্তিতে টাকা দেয়, তারা মেডিকেল, ক্যান্টিন ও বন্দিদের সাক্ষাৎ সংশ্লিষ্ট লাভজনক স্থানে ডিউটি পায়।’

সূত্র জানায়, লাইস সহকারী আব্দুল আউয়াল দীর্ঘদিন ধরে একই দায়িত্বে কর্মরত। এর আগে তিনি নিজ জেলা জামালপুরে বদলি হলেও আবার তদবির করে ময়মনসিংহ কারাগারে ফিরে আসেন একই দায়িত্বে। এ নিয়ে কারারক্ষীদের মধ্যে নানা ক্ষোভ রয়েছে।

  

লাইস সহকারী আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘লাইসের (ডিউটি বণ্টন) দায়িত্বে আমি না, তবে আমি এই শাখায় সহকারী হিসেবে কাজ করছি। এ কাজ সুবেদার আব্দুল কাদির করেন। আমি কারো কাছ থেকে টাকা বা ঘুষ নিই না।’    
 
সুবেদার মো. আব্দুল কাদির বলেন, ‘ডিউটি বণ্টন করে লাইস শাখা। এতে কাজ করেন কারারক্ষী আব্দুল আউয়াল। তিনি অনেকদিন ধরেই এই কাজ করছেন। এটি আমার দায়িত্বে নেই। আমি ৬ থেকে ৭ মাস আগে বদলি হয়ে এখানে এসেছি।’
  
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমার জানা নেই। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!