শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০৮:৩৩ পিএম

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের জন্য তৈরি করলেন ‘রাজকীয় চেয়ার’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২৫, ০৮:৩৩ পিএম

তৈরীকৃত ‘রাজকীয় চেয়ার’ ও ইনসেট এ আব্দুল মোতালেব।  ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

তৈরীকৃত ‘রাজকীয় চেয়ার’ ও ইনসেট এ আব্দুল মোতালেব। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

সালটা ২০০৪ এর ১৬ জুন। তৎকালিন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব তারেক রহমান ময়মনসিংহ জেলার ভালুকায় আব্দুল মোতালেবের সৌদি আরবের খেজুর বাগান উদ্বোধন করতে এসেছিলেন। ওই দিন বর্তমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উদ্বোধনের পর দেড় ঘন্টা বাগানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারেক রহমানকে বসতে দেয়ার মত কিছু ছিল না কৃষক মোতালেবের। ওই আক্ষেপ থেকে দুটি আলিশান চেয়ার তৈরী করে ২০০৪ সাল থেকে ১৭ বছর অপেক্ষা করছেন মোতালেব।

যার একটি চেয়ার ৯৫ কিউবিক ফিট বা কেবি ও অপরটি ৯০ কিউবিক ফিট বা কেবি কাঁঠাল গাছের কাঠ দিয়ে দুটি চেয়ার তৈরী করেন। ২০১৪ সাল চেয়ার তৈরী করে তারেক রহমানের অপেক্ষায় আছেন খেজুর মোতালেব। চেয়ার দুটিতে যেন কেউ বসতে না পারে, সে জন্য একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে চাবি ফেলে দিয়েছেন। তারেক রহমান আসলে তালা কেটে চেয়ার বের করে তাকে বসতে দিবেন। আমার নেতা তারেক মা বেগম খালেদা জিয়া তার মা মানে আমারও মা। যদি দল বা আমার নেতা চেয়ার নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাহলে একটি চেয়ারে আমার মা বেগম খালেদা জিয়া ও অপরটিতে আমার নেতা তারেক রহমান বসবেন।

কারণ, বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, উনি তো আর এখানে আসতে পারবেন না। তাই, চেয়ার নিয়ে গেলে যেন বেগম খালেদা জিয়া বসতে পারেন। এজন্য দুটি চেয়ার বানানো হয়েছে।

খেজুর মোতালেব ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের পাড়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। আব্দুল মোতালেবের বাড়িতে দীর্ঘদিনে বানানো নতুন দুইটি চেয়ার একটি কক্ষে রাখা। একটি চেয়ার বড়, অন্যটি তুলনামূলক একটু ছোট। বড় চেয়ারটি একটু বেশি আকর্ষণীয়। সঙ্গে রাখা আছে, দুইটি কাঠের পাখা। পাশেই রয়েছে, একটি খাট, চেয়ার ও দুইটি ডাইনিং টেবিল।

কাঁঠাল গাছের কাঠ দিয়ে তৈরীকৃত ‘রাজকীয় চেয়ার’।  ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

চেয়ারের পেছনের দেওয়ালে টানানো রয়েছে একটি ছবি। ছবিতে রয়েছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, কৃষক আব্দুল মোতালেবসহ অন্যরা।

এক সময় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অভাবের কারণে মাটির ঘরে বসবাস করতেন। একটু সুখের আশায় ১৯৯৮ সালে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানে ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিন বছর খেজুর বাগানে কাজ করেন। এ সময়ই তিনি মাতৃভূমিতে খেজুর চাষের পরিকল্পনা করেন। 

দেশে তার খেজুর বাগান করার অনুপ্রেরণা ছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। অনুপ্রেণার উৎস ছিল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সৌদি আরবে নিম গাছের বাগান। সেই অনুপ্রেরণা থেকে নিজ দেশে সৌদি আরবের খেজুর বাগান করার পরিকল্পনা করেন। তার ধারণা ছিল, সৌদি আরব দুই ঋতুর দেশ, বাংলাদেশ ৬ ঋতুর দেশ। দুই ঋতুর দেশে নিমগাছের বাগান হলে আমার দেশে কেন খেজুর বাগান হবে না। সেই অনুপ্রেরণা থেকে তিনি ২০০১ সালে খেজুর বাগান করা শুরু করেন।

আব্দুল মোতালেব বলেন, সে অনুযায়ী ২০০১ সালের শেষ দিকে উন্নত জাতের খেজুরের প্রায় ৩৫ কেজি বীজ নিয়ে দেশে আসি। মানুষ বিদেশে গেলে স্যুটকেস-ভর্তি জিনিস নিয়ে আসে। আর আমি নিয়ে আসছিলাম খেজুরের বীজ। এতে স্থানীয় লোকজন হাসাহাসি করতো। অনেকে পাগল বলতো। কারণ মানুষের মধ্যে ধারণা ছিল খেজুর সব মাটিতে হয় না। কিন্তু এই ধারণা ভুল প্রমাণ করতে বাড়ির আঙিনায় ২ বিঘা জমিতে রোপণ করি ২৭৫ খেজুরের চারা। কিন্তু প্রায় সব গাছই পুরুষ হয়ে যাওয়ায় খেজুর হয়নি। আবার চারা লাগালে আবারো একই অবস্থা। তৃতীয় দফায় দুটি গাছে খেজুর হয়।

ধীরে ধীরে ৭টি মাতৃগাছ পাওয়া যায়। বাকি সব পুরুষ গাছ। পুরুষ গাছগুলো কেটে মাতৃগাছগুলো থেকে কাটিং করে চারা উৎপাদন শুরু করেন মোতালেব। হতাশা কাটিয়ে সফলতা দেখা দেয়। প্রায় আড়াই দশকে মোতালেবের সাফল্যের পাল্লা ভারী হয়। বর্তমানে মোতালেবের ৭ বিঘা খেজুর বাগানে ৩ হাজারের বেশি সৌদি আরবের আজোয়া, শুক্কারি, আম্বার, লিপজেল ও মরিয়ম জাতের খেজুর গাছ রয়েছে। তার বাগান থেকে বছরে এখন আয় ৬০ লাখ টাকার বেশি খেজুর ও গাছ বিক্রি হয়।

এছাড়া, দেশি ও বিদেশি জাতের চারা ক্রস করে রসের জন্য আরও ৭ বিঘা জমিতে প্রায় ৮ হাজার গাছ নিয়ে নতুন একটি বাগান করেছেন মোতালেব। গুড় উৎপাদনের উদ্দেশ্যে এই বাগানটি গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে বীজের চারা এক হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন মোতালেব। কাটিং করা প্রতিটি কলমের চারা ১৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করছেন। এই চারা বিক্রি করার সময় খেজুর হবে এমন গ্যারান্টি দিয়ে অনেককে স্টাম্পে লিখিতও দেন আব্দুল মোতালেব। এ বছর বাগানে ৩৫৫ টি গাছে খেজুর হয়েছে। যা আগে কখনো হয়নি।

২০০৮ সাল থেকে চেয়ারসহ কয়েকটি কাঠের জিনিসের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এগুলো নির্মাণ করেন সুজন নামের একজন কাঠমিস্ত্রি। তিনি ভালুকার গতিয়ার বাজার এলাকার অমূল্যের ছেলে। সুজন মিয়া খেজুর বাগানে কাজ করার পাশাপাশি সন্ধ্যার পর চেয়ার তৈরীর কাজ করেন।

তৈরীকৃত ‘রাজকীয় চেয়ার’ ও টেবিল।  ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

চেয়ার তৈরী শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকা চুক্তিতে রাজি হওয়ায় সুজনকেই কাজ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী কাঁঠাল গাছের কাঠ দিয়ে কাজ শুরু করেন সুজন। নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৪ সালে। তারেক রহমানের জন্য নির্মাণ করা চেয়ারের করা নকশা বাংলাদেশের আর কোনো চেয়ারে নেই।

কারণ, মোতালেব নিজেই চেয়ারের নকশা করেছিলেন। চেয়ার তৈরীর পর নকশার কাগজ ছিড়ে ফেলে দেন। কারণ, এমন চেয়ার যেন আর কেউ তৈরী করতে না পারে।

কাঠ মিস্ত্রি সুজন বলেন, ৬ বছর আগেই চেয়ারসহ সবগুলো বানানো শেষ করেছি। বানানোর সময়ে প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকা বেতন পেয়েছি। কাজ শেষ হওয়ার পর আব্দুল মোতালেব আমাকে তার খেজুর বাগানে কাজে যোগদান করতে বলেন। এরপর থেকে প্রতি মাসে ১৮ হাজার টাকা বেতনে বাগানে কাজ করছি। এই টাকায় পরিবারের ভরণপোষণ করছি।

স্থানীয়রা জানান, আব্দুল মোতালেব সফল খেজুর চাষি। একসময় দরিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করলেও বর্তমানে কোটিপতি তিনি। মোতালেবকে নিয়ে এলাকার লোকজন গর্ববোধ করেন। সৌদি খেজুর চাষের মাধ্যমেই ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। এরইমধ্যে তারেক রহমানের জন্য আলিশান চেয়ার তৈরির বিষয়টি জানাজানি হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা রুবেল নামের একজন বলেন, তারেক রহমান ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী। তিনি খেজুর বাগানে এলে কৃষক আব্দুল মোতালেবসহ ভালুকাবাসী অনেক খুশি হবে। তারেক রহমান ভালুকাসহ পুরো ময়মনসিংহে সুনজর দিলে এখানকার চিত্র পাল্টে যাবে। এতে ময়মনসিংহের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ উপকৃত হবে।

খেজুর বাগান উদ্বোধনের দিনের কথা স্মৃতিচারণ করে আব্দুল মোতালেব বলেন, বিএনপিকে আমি মনেপ্রাণে ভালোবাসি। গণমাধ্যমে আমার খেজুর বাগান নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তারেক রহমান বাগান দেখতে চলে আসেন। তিনি কৃষি ও কৃষককে ভালোবাসেন বলেই এসেছিলেন। তখন তারেক রহমানকে বসতে দেওয়ার মতো আমার ঘরে কোনো চেয়ার ছিল না। তাই দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় চেয়ার তারেক রহমানের জন্য নির্মাণ করেছি।

আমার বাগানে সাংবাদিকরা যখন তারেক রহসানের সাথে কথা বলেন, তখন তারেক রহমান বলেছিলেন, আপনারা মোতালেবের জন্য দোয়া করবেন। তিনি যেন সৌদি আরবের খেজুর বাগান বাংলাদেশে করে সফল হতে পারেন। সাথে আরও বলেছিলেন, ইনশা-আল্লাহ আমি আবারও এই বাগানে আসব।

সাংবাদিকরা যখন আমাকে প্রশ্ন করেছিল, তখন আমি বলেছিলাম শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সৌদি আরবে নিমগাছের বাগান করাই ছিল দেশে খেজুর বাগান করার অনুপ্রেরণা। এমন কথা শুনে তারেক রহমান আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। আমি জানি তিনি দেশের ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রী। তিনি দেশে ফিরে অবশ্যই বাগান দেখতে এসে আমাকে আবার বুকে জড়িয়ে ধরবেন। এই অপেক্ষায় প্রহর গুনছি।

তিনি আরও বলেন, অনেক আগে বানানো শেষ হলেও চেয়ারে এখন পর্যন্ত কাউকে বসতে দিইনি। আমার ইচ্ছা, আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চেয়ারে বসে উদ্বোধন করবেন। এতে মনে প্রশান্তি পাব।

ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রুকুনুজ্জামান রুকন বলেন, বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব যখন বাংলাদেশে আসবেন, আমরা নিশ্চয় উনার কাছে এই খবরটা পৌঁছে দিব। আশাকরী মোতালেব সাহেবের এই আশাটা পূর্ণ হবে। উনিই এই বাগানটা উদ্ধোধন করেছিলেন। তৎকালীন সময়ে ওইখানে রাস্তা, বিদ্যুৎ, ডিপটিউবয়েলসহ সবকিছুই তারেক রহমানেই করে দিয়েছিলেন। এটা দলের পক্ষ থেকে করা হয়ছিল, সরকারের পক্ষ থেকে না।

সেখানে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের সহযোগিতা ছিল এবং দলের কৃষিবিদদের সহযোগীতা ছিলো। পুরো দলের সহযোগীতা ছিলো। মোট কথা, এই খেজুরের বাগানে পিছনে তারেক রহমানের দৃষ্টি ছিল। মোতালেব উৎসাহী ছিল, কিন্তু সবচেয়ে বড় অবদান তারেক রহমানের।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!