ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ইমরান নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ইমরান জেলার সদর উপজেলার পশ্চিম দাপুনিয়া এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে।
এদিকে, গত এক মাসে হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে তিনজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সেই সাথে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে আরও ৭০ জন রোগী।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। এতে হাসপাতালে চাপ বাড়ছে রোগীদের। কিন্তু ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্থানীয়ভাবে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ না থাকায় অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে ভুক্তভোগী মহলে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতাল সূত্র জানায়, বর্তমানে হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ৭০ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৪১ জন, নারী রোগী ২১ জন এবং শিশু রয়েছে আরও আটজন। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২ জন। তবে একই সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১৬ জন রোগী। এ হিসাবেও প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা।
সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে মমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ডের সহকারী ফোকাল পার্সন ও জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. মোস্তফা ফয়সাল রাহাত এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, প্রতিদিন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন ডেঙ্গু ওয়ার্ডে। এতে আক্রান্তদের বেশির ভাগই স্থানীয় বাসিন্দা। বিষয়টি নগরবাসীর জন্য অশনি সংকেত। এজন্য মশক নিধন কার্যক্রমে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ি করেছেন এই চিকিৎসক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। তবে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে বর্তমানে ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ২৪টি বেডে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই ২৪টি ওয়ার্ডের বিপরীতে বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছে ৭০ জন রোগী।
রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সরজ্ঞাম থাকলেও শয্যার সংখ্যার সংকট প্রবল। এ কারণে চিকিৎসা নিতে কষ্ট হচ্ছে রোগীদের। সেই সঙ্গে সেবা প্রদানকারী জনবলেও রয়েছে ঘাটতি। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি নগরীর বাউন্ডারী রোড এলাকার বাসিন্দা মো. জামান মিয়া বলেন, ডেঙ্গু মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে প্রতিদিনই মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমানের আমিসহ আমার এলাকায় প্রায় ৩০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। আমি বহুতল ভবনের ছয়তলায় বাসায় থাকি, তারপরও আমার ডেঙ্গু ধরা পড়ে তিনদিন ধরে হাসপাতালে আছি।
নগরীর কেওয়াটখালী এলাকার আব্দুল মতিন বলেন, হঠাৎ করে শরীরে জ্বর আসে। পরে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানতে পারি আমার ডেঙ্গু হয়েছে।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন খান বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের চারতলায় ডেডিকেটেড ওয়ার্ড চালুর পাশাপাশি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। রোগীদের সার্বক্ষণিক ফলোআপে রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে যাদের শরীরে টানা কয়েকদিন জ্বর, সর্দি এবং ঠান্ডার সমস্যা, তারা দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অন্যদিকে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডে সম্প্রতি চালু করা হয়েছে ক্রাশ প্রোগ্রাম। কিন্তু নামমাত্র এই প্রোগ্রামের কোনো ফল পাচ্ছে না নগরবাসী। এধরনের কার্যক্রমকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দায়সারা কাজ বলেও মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এইচ কে দেবনাথ সেই চিরচেনা বক্তব্যে বলেন, মশক নিধনে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম চলমান আছে।
মমেক হাসপাতালের উপপরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ডেডিকেটেড ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। এছাড়াও অক্সিজেন, স্টেরয়েড, ওষুধসহ সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট রাখা হয়েছে। আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছি।