ময়মনসিংহ নগরীতে খোদ সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা নামসর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠানে নিচ্ছেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং। অথচ তাদের সচল, বৃহৎ, কর্মচঞ্চল পরিবেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা। সেখানে সেই প্রশিক্ষণ চলছে খুপড়ি ঘরের মতো দুটি কক্ষ নিয়ে পরিচালিত এক প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কর্ণধার হচ্ছেন ময়মনসিংহের সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর মোশাররফ হোসেন।
অভিযোগ রয়েছে, তার কারণেই ময়মনসিংহ সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছেন নামসর্বস্ব সেই প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠানটির নাম ডায়নামিক ইঞ্জিনিয়ারিং সলিউশন। ময়মনসিংহ নগরীর মাসকান্দা এলাকায় এটি অবস্থিত। অনেকের ভাষ্যমতে মানসম্মত নয়, সার্টিফিকেট-সর্বস্ব শিক্ষার এক উদাহরণ এটি। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং এর নামে চলছে প্রহসন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে শিক্ষাজীবনের শেষদিকে শিক্ষার্থীদের বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা অর্জনের জন্য বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। সাধারণত ৩ মাস চলে এ ট্রেনিং। কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে এ বাস্তব শিক্ষা বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিভাগীয় প্রধানরা যোগাযোগ করে শিক্ষার্থীদের ট্রেনিং এর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ইলেকট্রিক্যাল বিষয়ের প্রায় সকল শিক্ষার্থীই গত কয়েক বছর ধরে এ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং নিচ্ছেন ডায়নামিক ইঞ্জিনিয়ারিং সলিউশনে। এ প্রতিষ্ঠানে যুক্ত আছেন ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের চিফ ইন্সট্রাক্টর মোশররফ হোসেন। প্রতিষ্ঠানটির সাইনবোর্ডেও আছে তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর। অভিযোগ আছে, তিনিই তার বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাধ্য করেন এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে।
সম্প্রতি নগরীর মাসকান্দা এলাকার ডায়নামিক ইঞ্জিনিয়ারিং সলিউশন এ সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একটি ভবনের নিচতলাতে দুটি কক্ষে চলে এ ট্রেনিং। অথচ এ দুটি কক্ষে ১০/১২ শিক্ষার্থীই ভালোভাবে বসতে পারেন না।
কথা হয় দায়িত্বে থাকা প্রশিক্ষক শহিদুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, তাদের এটি ভাড়া নেওয়া বাসা। এখানে ৩ মাস থেকে ৬ মাস মেয়াদি ট্রেনিং চলে। বর্তমানে ১১৫ জন শিক্ষার্থী আছে। তাদের মাঝে ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আছে ৮৫ জন শিক্ষার্থী। প্রশিক্ষার্থীদের কাছে মাসিক ৩ হাজার টাকা করে নেন তারা। ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক মোশাররফ হোসেন প্রতিষ্ঠানে যুক্ত নয় বলে তিনি জানান।
নাম প্রকাশে না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, পলিটেকনিকগুলোতে স্যারদের মার্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই স্যাররা যেখানে যেখানে ট্রেনিং এর ভর্তি হতে বলেন, শিক্ষার্থীরা যেখানে ভর্তি হতে বাধ্য হয়। ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইন্টিটিউটের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক মোশারফ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সুযোগ পায় না। তাই তার এখানে (ডায়নামিক ইঞ্জিনিয়ারিং সলিউশন) এ ভর্তি হয়। তিনি বলেন, বর্তমানে তার বিভাগের ৫০ জন শিক্ষার্থী ট্রেনিং নিচ্ছে। ২০০৬ সাল থেকে তিনি ময়মনসিংহের সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কর্মরত আছেন। ওই প্রতিষ্ঠানের আমি জড়িত না। আমার মোবাইল নম্বর প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে কিভাবে সেটা আমার জানা নেই। ওই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, সেখানে ভালো মানের ট্রেনিং করানে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থীরা স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষকের কাছে জিম্মি থাকেন। ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটেও তাই ঘটছে।
প্রশিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের মালিক কে আমার তা জানা নেই। তবে, প্রকৌশলী শামসুজ্জামান নামে একজন মাঝে মাঝে আসেন। তার নির্দেশনাতেই এটি চলে। তবে, এবিষয়ে জানতে প্রকৌশলী শামসুজ্জামানের নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও সেটি বন্ধ দেখায়।


