কোরবানির ঈদ উপলক্ষে জমজমাট হওয়ার কথা ছিল রূপগঞ্জের পশুর হাটগুলো। কিন্তু শুক্রবার (৬ জুন) ঈদের আগের শেষ হাটবারে টানা ভারী বৃষ্টিপাতে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।
কাদা-পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে অনেক হাট, ব্যাহত হয়েছে পশুর কেনাবেচা। দূর-দুরান্ত থেকে আসা ব্যাপারিদের মুখে এখন শুধুই উদ্বেগ—গরু বিক্রি হবে তো?
রাজধানীর উপকণ্ঠ রূপগঞ্জে এ বছর বসেছে ১৩টি অস্থায়ী পশুর হাট। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদন পাওয়া এসব হাটে পর্যাপ্ত পরিমাণ গরু ও অন্যান্য কোরবানিযোগ্য পশু আমদানি হয়েছে।
কিন্তু শেষ মুহূর্তে ক্রেতাদের উপস্থিতি অনেক কম। মূল হাট জমার কথা ছিল শুক্রবার দুপুরের পর। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। গরু দেখার তো দূরের কথা, অনেক ক্রেতাই হাটে ঢুকেই পিছু হটছেন।
১ নম্বর সেক্টর পূর্বাচল স্টেডিয়াম মার্কেট, শিমুলিয়া, মুড়াপাড়া, কাঞ্চন, তারাবো ও ভুলতা এলাকার হাটগুলোতে দেখা যায়, খোলা মাঠে রাখা গরুগুলো বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। কোনো কোনো হাটে পানি জমে হাঁটাও দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। জামালপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, মাগুরা ও নাটোর, রাজশাহী থেকে আগত অনেক ব্যাপারিই গরু বিক্রি করতে না পেরে পড়েছেন চরম উৎকণ্ঠায়।
কুষ্টিয়া থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী আমিনুল হক বলেন, ‘তিনদিনের পথ পাড়ি দিয়ে গরু এনেছি। শেষ দিনে বিক্রির ভরসায় বসে ছিলাম, কিন্তু এই বৃষ্টিতে কেউ গরুর ধারে-কাছে আসছে না। যদি বিক্রি না হয়, তাহলে গরু ফেরত নিতে হবে, খরচ হবে দ্বিগুণ।’
আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বৃষ্টি তো আমাদের কপালটাই ভেঙে দিল। শুকনো মাঠে গরু রাখা যায়, এখন তো গরু পড়ে যাচ্ছে কাদায়, রোগও হতে পারে।’
তবে হাট কর্তৃপক্ষ আশাবাদী। তাদের দাবি, বৃষ্টি কমে এলে বিকেল থেকে আবারও জমে উঠতে পারে বেচাকেনা। হাটগুলোর ব্যবস্থাপকরা জানিয়েছেন, মাঠে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা চলছে এবং যেকোনো মূল্যে শেষ মুহূর্তে বিক্রির পরিবেশ নিশ্চিত করতে চান তারা।
এ বছর রূপগঞ্জের তিন শতাধিক খামার ও প্রান্তিক পর্যায়ে প্রায় ১৭ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু লালন-পালন করা হয়েছে। অপরদিকে, এলাকাভিত্তিক চাহিদা রয়েছে প্রায় ২০ হাজার পশুর, অর্থাৎ প্রায় ৩ হাজার পশুর ঘাটতি পূরণে নির্ভর করতে হচ্ছে বাইরের জেলার ওপর। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেসব পশুও বিক্রি না হলে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা—দুই পক্ষেরই ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসে বলেছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় মধ্য ও পূর্বাঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে ঈদের মাত্র একদিন আগে হাটে বেচাকেনার সুযোগ সংকুচিত হয়ে পড়বে। একদিকে পশু বিক্রির চাপ, অন্যদিকে বৃষ্টির দাপটে প্রান্তিক খামারিদের মাথায় এখন দুশ্চিন্তার মেঘ।
বৃষ্টি প্রকৃতির আশীর্বাদ হলেও কখনো কখনো তা হয়ে ওঠে মানুষের গলার কাঁটা। কোরবানির আনন্দের ঠিক আগমুহূর্তে রূপগঞ্জের পশুর হাটগুলো যেন সে বাস্তবতারই এক জ্যান্ত চিত্র। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে হয়তো কিছুটা রক্ষা পাবে হাট এবং সেখানে জড়িয়ে থাকা হাজারো মানুষের জীবিকা।