নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের সময় গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের কয়েক গ্রামের মধ্যে। এতে নারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের জের ধরে বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে উপজেলার খাগকান্দা ইউনিয়নের বাহেরচর ও কাকাইলমোড়া গ্রামে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত শনিবার উপজেলার খাগকান্দা ইউনিয়নের বাহেরচর এলাকায় বিএনপির কার্যালয় উদ্বোধনের সময় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বেলায়েত হোসেন ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া মিয়া একে অপরকে আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে বলয় ভারী করার অভিযোগ করেন। একপর্যায়ে উপজেলার সিনিয়র নেতাদের সামনে বাকবিতণ্ডা শেষে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় বেলায়েতের অনুসারী ইদ্রিস আলীর লোকজন জাকারিয়ার লোকজনকে মারধর করে। এ ঘটনার পর থেকে খাগকান্দা এলাকায় কাকাইলমোড়া, নয়নাবাদ ও চম্পকনগর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে।
এ নিয়ে মঙ্গলবার সকালে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বেলায়েত হোসেন অনুসারী কাকাইলমোড়ার ইদ্রিস আলী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়ার লোকজন দা, ছুরি, টেটা বল্লমসহ দেশীয় অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে একে অপরের ওপর হামলা করে। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে টেটাবিদ্ধসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়। এদের মধ্যে টেটাবিদ্ধ মঞ্জুর হোসেন, মকবুল ও জসিমসহ ৫ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হামলার সময় কাকাইলমোড়া ইদ্রিস আলী, মঞ্জুর হোসেন, আবেদ আলীসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালায়।
সংঘর্ষের সময় প্রথমে পুলিশ গিয়ে নিয়ন্ত্রণ আনতে ব্যর্থ হয়। পরে যৌথবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ইউনিয়ন বিএনপির সধারণ সম্পাদক জাকারিয়া বলেন, ‘ইদ্রিস আলী আওয়ামীলীগের লোক। সে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মঞ্জুর হোসেনসহ তার দল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সে কোনো সময়ই বিএনপি করে নাই।’
ইদ্রিস আলী জানান, ‘জাকারিয়া খাগকান্দা ইউনিয়ন ওলামা লীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেনসহ আওয়ামীলীগের ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাদের দশটি বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। এতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।’
এলাকাবাসী জানান, খাগকান্দা ইউনিয়নের বাহেরচর ও কাকাইলমোড়া গ্রামের দীর্ঘ দিন ধরে গ্রামবাসী মামলা মোকদ্দমা, গ্রাম্যদলাদলি এবং আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। সেই দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে তুচ্ছ ঘটনা নিয়েই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। আর এতে নেতৃত্ব দেয় ক্ষমতাশীনরা। বর্তমানে উক্ত ২ গ্রামে মধ্যে ১৫/২০টি মামলা চলমান রয়েছে।
আড়াইহাজার থানার ওসি খন্দকার নাসির উদ্দিন জানান, ‘এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছি।’