আর ক’দিন পরই হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উৎসবকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগরের শাঁখারীপল্লীর কারিগররা। পূজা উপলক্ষে শাঁখার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দিনরাত পরিশ্রমে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন তারা।
তবে শাঁখা এখন আর শুধু পূজার অলঙ্কার নয়, এটি বিবাহিত নারীদের সৌভাগ্যের প্রতীক। শত শত বছর ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই শিল্প বাঁচিয়ে রেখেছেন জামনগরের শাঁখারীরা। সম্প্রতি এই শাঁখাশিল্পকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে কারিগরদের মধ্যে তৈরি হয়েছে নতুন আশার আলো।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ১৬১০ সালে ঢাকায় রাজধানী প্রতিষ্ঠার সময় সুবেদার ইসলাম খাঁ সঙ্খশিল্পীদের বাখেরগঞ্জ থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। পরে রাজধানী সরিয়ে নিলে অনেক শিল্পী বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েন। এর মধ্যে একটি বড় অংশ স্থায়ীভাবে বসতি গড়েন নাটোরের জামনগরে। এখানকার শাঁখা ও গহনা আজও সমাদৃত।
বর্তমানে প্রায় ৬০-৭০ পরিবার শাঁখা তৈরির সঙ্গে যুক্ত। ভারত ও শ্রীলঙ্কা থেকে কাঁচামাল আমদানি করে তারা বিভিন্ন ধরনের শাঁখা যেমন- পাকা শাঁখা, সাদা শাঁখা, সোনা শাঁখা, পাথর শাঁখা, কড়ি শাঁখা, মোটা-চিকন শাঁখা, মান্তরা শাঁখা ইত্যাদি তৈরি করছেন। দামও ভিন্ন-সাধারণ শাঁখা ২০০ টাকা থেকে শুরু করে স্বর্ণালঙ্কারকৃত শাঁখার দাম ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়।
কারিগর নিরেন চন্দ্র সেন জানান, আমাদের বাপ-দাদারা এ পেশায় ছিলেন, আমরাও আছি। আগে হাতে দিনে পাঁচ জোড়া শাঁখা তৈরি হতো, এখন মেশিনে ৫০ জোড়া তৈরি করা যায়।
কারিগর সুমতি রাণী বলেন, মহাজনরা কাঁচামাল দিয়ে যান, আমরা তৈরি করি, পরে তারা নিয়ে যান। এই কাজেই আমাদের সংসার চলে।
ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, শুধু দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে এ বছর ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার শাঁখা বিক্রির আশা করছি। জিআই স্বীকৃতি হলে বিদেশেও রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে।
জামনগর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী জানান, প্রায় দুই শত বছর ধরে এ অঞ্চলের মানুষ এই পেশায় যুক্ত। জিআই স্বীকৃতি পেলে এটি সমগ্র এলাকার জন্য গৌরব বয়ে আনবে।
বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফ আফজাল রাজন বলেন, আমরা শাঁখারীপল্লীর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠিয়েছি। অনুমোদন হলে বাগাতিপাড়ার শাঁখা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন