পটুয়াখালীর দুমকিতে জাইকা সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, প্রকল্পের নামে হরিলুট, ভাগবাঁটোয়ারা ও নিম্নমানের কাজের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে রাস্তাঘাট, কালভার্ট, সেতু, ড্রেন ও স্ট্রিট সোলার লাইট স্থাপনসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইউজিডিপি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭৮টি স্ট্রিট সোলার লাইট, ৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকায় ১০টি ইউ-ড্রেন এবং ১০ লাখ টাকায় পাঁচটি পাওয়ার টিলার বিতরণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
কাগজে-কলমে এসব কাজ সম্পন্ন দেখানো হলেও মাঠপর্যায়ে অসামঞ্জস্য ধরা পড়ে, এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
মাঠঘুরে দেখা যায়, ঘোষিত ৭৮টি সোলার লাইটের মধ্যে আঙ্গারিয়ায় ২৬টি, লেবুখালীতে ১৩টি, পাঙ্গাশিয়ায় ৯টি, শ্রীরামপুরে ১৭টি এবং মুরাদিয়া ইউনিয়নের ফেরিঘাট, বাজার, মসজিদ ও কয়েকজন প্রভাবশালীর বাড়ির সামনে লাইট বসানো হয়। এর বেশির ভাগই ৩-৪ মাসের মধ্যেই অচল হয়ে গেছে। ১০টি ইউ-ড্রেনের মধ্যে শ্রীরামপুরে নির্মিত ৭টির মান নিয়ে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। কৃষক গ্রুপের জন্য বরাদ্দ পাঁচটি পাওয়ার টিলার নিয়েও অভিযোগ-রিকন্ডিশন মেশিন কমদামে কিনে বরাদ্দের টাকা লোপাট করা হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের যোগসাজশে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে ইউ-ড্রেন নির্মাণ এবং রিকন্ডিশন পাওয়ার টিলার সরবরাহের মাধ্যমে প্রকল্পে অনিয়ম করা হয়েছে। মুরাদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোজাম্মেল হাওলাদার বলেন, রাস্তা নির্মাণের নামে টাকা দেখানো হলেও বাস্তবে অর্ধেক কাজও হয়নি। আরেক বাসিন্দা জানান, নিম্নমানের কাজে কয়েক মাসের মধ্যেই রাস্তায় ফাটল ধরে গেছে।
দুমকি উপজেলা প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘জাইকার প্রকল্প সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলতে পারবেন। তবে অনিয়ম পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দুমকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুজর মো. এজাজুল হক জানান, তার দায়িত্বকালীন সময়ে জাইকার কোনো প্রকল্প হয়নি। অভিযোগ পেলে খোঁজ নিয়ে অনিয়ম নিশ্চিত হলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
সচেতন মহলের অভিমত, উন্নয়ন প্রকল্পে সঠিক তদারকি না থাকলে সরকারি উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বরাদ্দকৃত অর্থ লুটপাটের হাতিয়ার হয়ে উঠলে স্থানীয় উন্নয়নও থমকে যায়।



