রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন শারমিন খাতুন। তিনি একজন রিকশাচালক বাবার মেয়ে, মা অন্যের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন। তাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলায়। অভাব-অনটনই এই পরিবারের নিত্যসঙ্গী।
শারমিন রাজশাহী টিটিসি থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেই সেলাইমেশিন চালিয়ে ও টিউশনি করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আর্থিক সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে পারেননি। পরে অর্থ জোগাড় করে দেরিতে ফরম পূরণের টাকা জমা দিলেও তা বোর্ডে পৌঁছায়নি। ফলে তার পরীক্ষার প্রবেশপত্র আসেনি।
গত বুধবার (২৫ জুন), পরীক্ষার আগের দিন কলেজে গিয়ে বিষয়টি জানার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন শারমিন। তার অভিভাবকরা নিরক্ষর হওয়ায় তারা কোনো সহায়তা করতে পারেননি। একপর্যায়ে তিনি কলেজের শিক্ষকদের শরণাপন্ন হন।
শারমিনের এ দুরবস্থায় এগিয়ে আসেন কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বায়েজিদ বোস্তামী। তিনি শিক্ষার্থীর মানবিক বিপর্যয় দেখে দ্রুত রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে যোগাযোগ করেন এবং ব্যাপারটি ব্যক্তিগতভাবে দেখভাল করেন। রাত-দিন পরিশ্রম করে অবশেষে পরীক্ষার আগের দিন মধ্যরাতে শারমিনের প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে তার বাড়িতে গিয়ে হাতে তুলে দেন অধ্যাপক বায়েজিদ। পরদিন পরীক্ষা দিতে পারেন শারমিন খাতুন।
জানতে চাইলে রূপালী বাংলাদেশকে শারমিন খাতুন বলেন, ‘আমার বাবা একজন রিকশা চালক। মা অন্যের বাসায় কাজ করেন। এভাবেই চলে আমাদের অভাবে সংসার। আমি নিজে সেলাই ফোঁড়ার কাজ ও টিউশনি করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। অর্থের কারণে সঠিক সময়ে ফরম ফিলাপ করতে পারিনি। তাই দেরিতে ফরম ফিলাপের টাকা জমা দেওয়ায় তা বোর্ডে জমা হয়নি। একারণে আমার প্রবেশপত্র আটকে যায়। এবার পরীক্ষা দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আমি দুঃচিন্তায় পড়ি। বিভিন্ন শিক্ষকের সহায়তা চায়। অবশেষে আমার অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক বায়েজিদ বোস্তামী স্যার অনেক সহযোগিতা করেছেন। তিনি নিজের টাকা খরচ করে আমাকে প্রবেশপত্র এনে দিয়েছেন। তাই এবার পরীক্ষা দিতে পারছি। এজন্য আমি স্যারের কাছে চির কৃতজ্ঞ।’
রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বায়েজিদ বোস্তামী রূপালি বাংলাদেশকে বলেন, ‘শিক্ষার্থী শারমিন প্রবেশপত্র না পেয়ে দুঃচিন্তায় ছিলেন। আমি এ ঘটনা জানতে পরে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করে রাত অবধি কাজ শেষে শিক্ষার্থী শারমিনের হাতে প্রবেশপত্র তুলে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘শারমিন একজন সমাজের পিছিয়ে পড়া পরিবারের সন্তান। এধরণের পরিবারে সহযোগিতা করা মানবিক দায়িত্ব। নিজ থেকেই আমি এই কাজ করেছি। একজন শিক্ষক হিসেবে এটি আমার দায়িত্ব বলে মনে করেন তিনি।’
রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আমিনা আবেদিন রূপালি বাংলাদেশকে বলেন, ‘শিক্ষার্থী শারমিন দেরিতে ফরম পূরণ করায় তার প্রবেশপত্র পেতে সমস্যা হয়েছিল। বিষয়টি জানতে পেওে শিক্ষাবোর্ডে গিয়ে আমাদের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বায়েজীদ বোস্তামি অনেক পরিশ্রম করে শিক্ষার্থী শারমিনের প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে দেন। যার কারণে তার এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক বায়েজীদ বোস্তামি অত্যন্ত সৎ, নিষ্ঠা, কর্তব্যপরায়ণ ও দায়িত্ববান মানুষ। মানবিক দিকটি বলতে আমাদের অধ্যাপক বায়েজীদ বোস্তামি যে কাজটি করেছেন তা অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার। শিক্ষক হিসেবে আমাদের দেশের প্রতিটি শিক্ষকের উচিত এই ধরণের কাজ করা যা অধ্যাপক বায়েজীদ বোস্তামী করেছে। তিনি অধ্যাপক বায়েজীদ বোস্তামীর সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ কামনা করেন।’